প্রতিনিধি রাজশাহী
আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে রেলপথ অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির (স্টপেজ) দাবিতে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এতে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ।
এ সময় আন্দোলনকারীরা স্টেশন সংস্কার ও আন্তনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। বেলা একটার দিকে কর্মসূচি শেষ হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দাবির মধ্যে ছিল সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালার চর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি এবং স্টেশনের সংস্কার।
১৯২৯ সালে উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয় নিমপাড়া ইউনিয়নের বরকতপুর এলাকায়, যা নন্দনগাছী স্টেশন নামে পরিচিত। শতবর্ষী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। নিয়ম অনুযায়ী এই স্টেশনে স্টেশনমাস্টার, টিকিট মাস্টার, পোর্টারম্যান, পয়েন্টসম্যান, গেটম্যানসহ জনবল ছিল ১২ জন। বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। শুধু দুটি লোকাল ট্রেন সেখানে থামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অবরোধে অংশ নেওয়া লোকজন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে ট্রেন থামানোর দাবিতে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদীগামী একটি মেইল ট্রেন এলে স্টেশনে প্রবেশের আগেই জাতীয় পতাকা ও লাল পতাকা নিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেন আন্দোলনকারী। তাঁরা ট্রেনের চালকের রুমে গিয়ে ট্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেন। তাঁরা কেউ রেললাইনে, কেউ ট্রেনের ছাদে উঠে আবার কেউ প্ল্যাটফর্মে অবস্থান নেন। প্রায় ১০-১২ মিনিট পর ট্রেনটিকে যেতে দেওয়া হয়।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আসে চিলাহাটি থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর ট্রেন বরেন্দ্র এক্সপ্রেস। নন্দনগাছী রেলস্টেশনে ট্রেনটির নির্ধারিত যাত্রাবিরতি নেই। তবে দাবি আদায়ের জন্য রেললাইনে সাধারণ লোকজন অবস্থান নেওয়ায় ট্রেন দুটি সেখানে থামতে বাধ্য হয়। প্রায় ১৫ মিনিট ট্রেনটিকে আটকে থাকার পর আবু সাইদ চাঁদের সহযোগিতায় ট্রেনটি সেখান থেকে রাজশাহীর দিকে রওনা হয়।
![]() |
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী রেলস্টেশনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এ সময় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ বলেন, ‘যদি এরপরও আমাদের সমস্যার সমাধান না হয়, তবে হাজার হাজার মানুষ নন্দনগাছীতে অবস্থান নেবে। কোনো ট্রেন চলবে না। আপনারা (রেলওয়ে) বলছেন আপনাদের জনশক্তি নেই, আমরা বিনা পয়সায় জনশক্তি দেব, স্টেশনমাস্টার দেব, তবু স্টেশন চালু করতে হবে। তারপরও যদি ট্রেন না থামে তাহলে আন্দোলন হলে তা থামানোর দায়দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।’
অবরোধে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, নন্দনগাছী স্টেশনটি তিন উপজেলা (চারঘাট, বাঘা ও পুঠিয়া) থেকেই নিকটবর্তী। এই তিন উপজেলার হাজারো মানুষ বিভিন্ন এলাকায় যাত্রা করেন। সড়কপথে যানজটের কারণে ভোগান্তি হয়। বিকল্প হিসেবে রেলপথ ব্যবহার করা যায়। নন্দনগাছী স্টেশনে সব আন্তনগর ট্রেন যাত্রাবিরতি দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারও রাজস্ব পাবে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি নাজমুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের মানুষের প্রাণের দাবি আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি। বহু বছর ধরে কয়েক দফা এই দাবি নিয়ে মানুষ অবরোধ ও মানববন্ধন করেছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই ব্যবস্থা নেয়নি। অতি দ্রুত এখানে ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হোক। স্টেশনটি চালু করা হোক।’
নন্দনগাছীর পার্শ্ববর্তী সরদহ রেলস্টেশনের মাস্টার ইকবাল হোসেন বলেন, অবরোধের কারণে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেন আশপাশের বিভিন্ন স্টেশনে প্রায় এক ঘণ্টা থেমে ছিল। এ ছাড়া কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেনটি ১৫ মিনিট দেরিতে গেছে। বেলা একটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধির সঙ্গে রেল কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।