নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

‘জুলাইয়ের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করে জুলাই ঐক্য | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু দলমত-নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান ও ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে বাংলাদেশে আর কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।

আজ রোববার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে জুলাই ঐক্যের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ‘জুলাইয়ের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার দাবিতে’ এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

৬ মে জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে ৩৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে এই জোটের আত্মপ্রকাশ হয়।

জুলাই ঐক্যের সংগঠক এ বি জুবায়েরের সঞ্চালনায় জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মদিন উপলক্ষে রণসংগীত দিয়ে আজকের সমাবেশ শুরু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী এলাকায় শহীদ হওয়া আশিকুর রহমান হৃদয়ের বড় ভাই আনিসুর রহমান সমাবেশের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ। সমাপনী বক্তব্য দেন জুলাই ঐক্যের সংগঠন প্লাবন তারিক।

প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘জুলাইয়ে গণহত্যাকারী দলের সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কাউকে বিচারের বাইরে রাখা চলবে না। আমাদের মধ্যে আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে, মতপার্থক্য থাকতে পারে, ভুল–বোঝাবুঝি হতে পারে কিন্তু দিন শেষে ফ্যাসিস্ট সরকার ফিরে আসার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আর কোনো ভারতীয় দাসত্ব মেনে নেব না, কোনো দেশের দাসত্ব মেনে নেব না। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের মতো চলবে।’

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। কিন্তু গত ৯ মাসে খুনিদের বিচার দৃশ্যমান হয়নি। অন্যদিকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে বসে আবারও দেশে ফিরে এসে রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখছেন। জুলাই যোদ্ধারা বেঁচে থাকতে সেই স্বপ্ন কোনো দিন বাস্তবায়ন হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতের আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের একাংশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এনসিপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ গেড়ে বসার প্রথম মিশন ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ড। তার পর থেকে যে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাঁদেরই হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আজ হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরে পেয়েছে। তাই আগামীর বাংলাদেশে যাঁরা ভারতের সুরে কথা বলবেন, যে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে মিলে যাবে, দেশের জনগণ তাঁদের ভারতে পাঠিয়ে দেবে।’

গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে চাইলে সবার আগে দরকার উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার। উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন না করলে কোনোভাবেই নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা যাবে না। উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে অনেক মাস্টারমাইন্ড রয়েছে, যারা জুলাইয়ের সব শক্তির সঙ্গে অনৈক্য বিভেদ সৃষ্টি করেছে। এভাবে রাষ্ট্র চলতে পারে না।

জুলাই ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের আহ্বায়ক (আপ বাংলাদেশ) আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র চলবে জুলাইয়ের শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে। বাংলাদেশের মানুষ দিল্লির দাসত্ব চিরতরে বর্জন করেছে। ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের জায়গা বাংলাদেশে হবে না। যদি আধিপত্যবাদের ছায়া আবারও দেখা যায়, তাহলে জুলাই যোদ্ধারা আবার জীবন দিতে প্রস্তুত আছে।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস যতক্ষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে আছেন, ততক্ষণ আমাদের সমর্থন থাকবে।’

প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান হোসাইন সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।