নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
জাতীয় রাজস্ব ভবনের সামনে প্রহরায় বিজিবি সদস্যরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। টানা আট দিনের কর্মবিরতিতে দেশের শুল্ক ও কর প্রশাসনের বেশির ভাগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আমদানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের অধিকাংশ দাফতরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র রফতানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা চালু আছে।
শনিবার সকাল থেকে আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সদর দপ্তরের সামনে বিজিবি- সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। ভবনের নিচতলা ও চেয়ারম্যানের দপ্তরের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকার দাবি না মানলে ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, আমদানিকারকেরা বিল অব এন্ট্রি অনলাইনে জমা দিলেও প্রসেসিং বন্ধ থাকায় পণ্য বন্দরে আটকে আছে। মাঠপর্যায়ের কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অফিসগুলোতেও কর্মবিরতি চলছে।
আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি জানিয়েছেন:
১. এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল,
২. এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের অপসারণ,
৩. রাজস্ব সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ জনসমক্ষে প্রকাশ,
৪. সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা।
সরকারের পক্ষ থেকে অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধন’ আনার কথা বলা হলেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত কাঠামো এনবিআর কর্মকর্তাদের মর্যাদা ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করবে এবং প্রশাসনিক ভারসাম্য নষ্ট করবে।
দেশের সব কর অঞ্চল, কাস্টমস অফিস ও ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা অফিসে গেলেও কোনো কাজ করছেন না। শুধু পণ্য রফতানি ও বিদেশগামী যাত্রীসেবা চালু আছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারি করে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের ভাষ্য, নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকে পৃথক করাই এর উদ্দেশ্য, যাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়ানো যায়। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই অধ্যাদেশের বেশ কিছু ধারা বৈষম্যমূলক এবং এটি রাজস্ব প্রশাসনের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করবে।
সরকার ও আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।