নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

 সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন লে. কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এমন কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে না, যা জাতীয় নিরাপত্তা বা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হতে পারে—বলেছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

সোমবার রাজধানীর সেনাসদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে করিডোর ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

লে. কর্নেল শফিকুল বলেন, ‘করিডোর হোক বা নিরাপত্তা কিংবা সার্বভৌমত্ব—এই বিষয়ে সেনাবাহিনী আপসহীন অবস্থানে আছে। দেশের স্বার্থেই ৫ আগস্ট থেকে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ সংগঠিতভাবে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে, তাহলে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’

চট্টগ্রামের একটি কারখানা থেকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর পোশাক উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি অবশ্যই উদ্বেগজনক। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনীর অভিযানে ২৪১টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১ হাজার ৯৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত আগস্ট থেকে চলমান অভিযানে মোট ৯ হাজার ৬১১টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৪ হাজার ২৬৬ জন। তাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং সদস্য, তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, অপহরণকারী, মাদক কারবারি, প্রতারক, চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী রয়েছেন।

ভাষানটেক এলাকায় ২০ মে পরিচালিত এক বিশেষ অভিযানে ‘হিটলু বাবু’সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে ৪টি বিদেশি পিস্তল ও ২৮ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।

মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে গত ৪০ দিনে ৪৮৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন ৪ হাজার ৪০০ জন মাদক কারবারি। অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও অবৈধ মদ জব্দ করা হয়েছে।

শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫ আগস্ট থেকে টানা কাজ করছে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে।

যশোর ও সাতক্ষীরায় বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ জেলি মেশানো চিংড়ি জব্দ এবং সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

জুলাই মাসের আন্দোলনে আহত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। বর্তমানে ৩৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সেনাবাহিনী দুই সপ্তাহব্যাপী বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

এই কার্যক্রমের আওতায় দেশের প্রধান বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও মহাসড়কে টহল, চেকপোস্ট, গতি নিয়ন্ত্রণ, কালোবাজারি রোধ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। ঈদের আগমন ও প্রত্যাবর্তনপর্বে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করাই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।