প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম

বাংলাদেশ শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন রাজারহাট উপজেলা শাখার নেতা রুবেল মিয়া হুমকি দেওয়া উপজেলা বিএনপি আহবায়ক আনিছুর রহমান | ছবি: ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট

‘কলিজা টানি ছিঁড়ি ফেলব, একবারে টানি ছিঁড়ি ফেলব তোমার, চেনো তুমি, এ চেনো! খুব পাওয়ার দেখাও, একবারে নিশ্চিহ্ন করে দেব তোমাক, চেনো বিএনপিকে।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাটের এক বিএনপি নেতার এমন একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে।

হুঙ্কার দেওয়া বিএনপির ওই নেতার নাম আনিছুর রহমান। তিনি রাজারহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভিডিওতে বাংলাদেশ শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন রাজারহাট শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক রুবেল মিয়াকে হুমকি দিচ্ছিলেন আনিছুর। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমার নামে আমি মামলা দেব। আমি থানা যায়া ওখানে বসি এজাহার লিখব, উয়াক (রুবেলকে) অ্যারেস্ট করি দিয়া তারপরে আমি আসব।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন রাজারহাট শাখার নেতা রুবেল মিয়া বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চান্দামারী দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে অভিভাবক সমাবেশে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি পদের জন্য নাম চাওয়া হয়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান রাজারহাট উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রুশো চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক বাদশা মিয়ার ছোট ভাই শাহ আলম মাস্টার ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী রহিমা বেগমের নাম প্রস্তাব করেন। এ সময় সভাপতির জন্য ওই তালিকার বিপরী‌তে তিনিও (রুবেল মিয়া) রাজারহাট উপজেলা জামায়েতের সেক্রেটারি আহমদ আলীর নাম প্রস্তাব করলে সেখানে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

রুবেল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে লায়ন নামের এক বিএনপি কর্মী আমাকে ফোনে থানা মোড়ে ডাকে নেন। আমি সেখানে গেলে আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন আমার পথ রোধ করে পাশের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে চড়থাপ্পড় মারেন, লাঞ্চিত ও গালিগালাজ করেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে এখনো থানায় অভিযোগ করিনি। তবে দলের (জামায়াতে ইসলামী) ঊর্ধ্বতন নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করব।’

ভিডিও প্রসঙ্গে রাজারহাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান বলেন, রুবেল মিয়া শিবির করেন। তিনি বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যা কথা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তাঁকে বলা হলে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, ‘পরে রুবেলকে নিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের ছেলেরা চা-নাশতাও করেন। সুন্দরভাবে তাঁরা সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান। কিন্তু তিনি ওই ঘটনার পুরো ভিডিও না দিয়ে শুধু আমার কথার অংশটুকু অন্য একজনের ফেসবুক থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ বিএনপির দায়িত্বশীল পদে থেকে এভাবে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, ‘রাগের মাথায় ওভাবে বলেছি। এ জন্য প্রয়োজনে জামায়াতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করব।’

এ বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, বিএনপির কোনো নেতা–কর্মী যদি কাউকে এভাবে হুমকি দিয়ে থাকেন, তবে সেই দায়ভার ওই ব্যক্তির নিজের। দল এর দায় নেবে না। ভুক্তভোগী ব্যক্তি অভিযোগ দিলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।