[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

এনসিপির সভায় সদস্যদের প্রশ্নবানে নেতাদের জবাব

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠনের পর প্রথমবারের মতো নিজ জেলা পঞ্চগড়ে যান দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম | ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টক শোতেও অনেকে এনসিপির আলোচিত কয়েকজন নেতার সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। শুক্রবার দলের সাধারণ সভায় এ নিয়ে কথা হয়, কেউ কেউ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাঁরা অভিযোগ খণ্ডন করে সভায় জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন।

শুক্রবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৯ ঘণ্টা বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। এটি দলের তৃতীয় সাধারণ সভা। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সঞ্চালক ছিলেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন। সভায় দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ২১৬ সদস্যের মধ্যে ১৮০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও জনপরিসরে এনসিপির বেশ কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। রোববার এই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি জানিয়েছে।

শুক্রবারের সাধারণ সভায় অংশ নিয়েছেন, এনসিপির এমন পাঁচজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, সভার একপর্যায়ে আলোচনা ওঠে যে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য এনসিপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে নানা প্রশ্ন করেন। ঈদুল ফিতরের আগে গত মাসে পঞ্চগড়ে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করে যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়।

সভা-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেছেন, তাঁকেসহ এনসিপির কোনো কোনো নেতাকে টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু বানানো) করে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসবের মূল উদ্দেশ্য এনসিপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। তিনি দাবি করেন, নিরাপত্তার কারণে এবং জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহার করতে হয়। সেই গাড়িও ভাড়া করা।

এনসিপির তৃতীয় সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ঢাকা, ১৮ এপ্রিল | ছবি: সংগৃহীত

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রশ্নের জবাবে সারজিস আরও বলেছেন, তাঁর জীবনযাত্রা আগে থেকেই সচ্ছল। তাঁর বিরুদ্ধে ফেসবুকে তোলা অভিযোগের অধিকাংশই অতিরঞ্জন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর নানাভাবে সহযোগিতা চেয়ে অনেকে যোগাযোগ করেছেন। অনেককে সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু এর বিনিময়ে কোনো আর্থিক সুবিধা নেননি। নানা জায়গায় গেলে অনেকে এসে ছবি তোলেন।

৯ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ (এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) ও সারজিস আলম। সেখানে তাঁরা লিখিতভাবে কিছু অভিযোগ জানান। এ বিষয়ে সভায় হাসনাত বলেন, বিষয়টি তাঁদের ব্যক্তিগত। বিষয়টি এনসিপির সঙ্গে যুক্ত কিছু নয়। তবে তাঁরা কার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছেন, তা সভায় জানাননি।

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, হাসনাতের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে তিনি নিজে থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

সভায় এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের ‘আর্থিক অনিয়মের’ অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে চলমান আলোচনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তানভীর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। তানভীর তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে যেকোনো অনুসন্ধানকে স্বাগত জানান। এ ক্ষেত্রে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে পক্ষ থেকে আজ শনিবার গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তাও পাঠানো হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি।

এনসিপির দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো অবস্থান নেওয়া নিয়ে সাধারণ সভায় আপত্তি তোলা হয়। দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় নয়, এ বিষয়ে সভায় ঐকমত্য হয়েছে।

এনসিপি নেতা গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর। তাঁর ‘আর্থিক অনিয়মের’ অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে চলমান আলোচনার বিষয়টি দলীয় সভায় তোলা হয় | ছবি: সংগৃহীত

এই সভাকে ‘আশাব্যঞ্জক’ উল্লেখ করে এনসিপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, নানা বিষয়ে দলের অনেকের মনে ক্ষোভ ছিল। সাধারণ সভায় তাঁরা খোলামনে সেগুলো বলেছেন, জবাবদিহি চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে একটা চর্চা শুরু হলো যে কেউই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নন।

এনসিপির কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে সেটি তদন্ত করার জন্য ‘শৃঙ্খলা ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। শুক্রবারের সভায় অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এবং তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে দল ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত দলের সবাই সংশ্লিষ্ট নেতার পাশেই থাকবেন।

শনিবার গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান ফেসবুকে এক পোস্টে এনসিপির নেতা গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক নিয়োগ, এনসিটিবির বাণিজ্য ও বিভিন্ন তদবির করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ তুলেছেন। রাশেদ খান লিখেছেন, ‘সারজিস ও তানভীর আজকাল টাকাপয়সার উৎস নিয়ে নিজ দলের অনেক সদস্যের কাছে জেরার মুখোমুখি হচ্ছেন। হয়তো খুব শিগগির দুদকের মুখোমুখিও অনেককে হতে হবে।’

এসব অভিযোগ ও এনসিপির সাধারণ সভার আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সারজিস আলম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এগুলোর সত্যতা নেই। অসত্য এসব প্রচারণায় তাঁরা বিব্রত। প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তাঁকে কেন্দ্র করে নানা মিথ্যা ছড়ানো হয়েছে। এতে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, অনেকের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝি হচ্ছে।

যে বিষয়গুলো নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে এনসিপির সাধারণ সভায় অনেকে উদ্বেগ জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন সারজিস। তিনি বলেন, ‘এই চর্চাটা সব সময় থাকা উচিত। এটা আমাদের আন্তসম্পর্ক ও সাংগঠনিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করবে। জবাবদিহির সুযোগ থাকলে কেউ ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারবে না। পাশাপাশি অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন