প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও

শ্রুতলেখক ছোট ভাইয়ের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মহির উদ্দিন। আজ বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বয়স তখন সবে তিন মাস। পৃথিবীর আলো-হাওয়াই ঠিকমতো দেখা হয়নি। তখনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারায় মহির। তবে এতে দমে যায়নি সে। মনের জোরে দৃষ্টিহীনতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে। এবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ নিচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায়।

মহির উদ্দিন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব শুখানপুকুরী গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে। প্রতিকূলতার মধ্যেও তার ইচ্ছা, শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। হাসি ফোটাতে চায় মা-বাবার মুখে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিশক্তি হারালেও ছেলে মহিরকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা ছিল কৃষক মিলনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিরকে মুখে মুখে পড়াতে থাকেন মিলন। সেসব পড়া মহিরও দ্রুত রপ্ত করে ফেলত। পরে ছেলেকে বাড়ির পাশের পূর্ব শুখানপুকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন মিলন। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মহির।

২০১৭ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয় মহিরকে। এরপর একের পর এক শ্রেণি পেরিয়ে যেতে থাকে সে। এবার সেখান থেকেই শ্রুতলেখকের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মহির। মহিরের কেন্দ্র পড়েছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। ১০ এপ্রিল এ পরীক্ষা শুরু হয়।

মহিরের ছোট ভাই মাসুদ রানা শ্রুতলেখকের দায়িত্ব পালন করছে। মাসুদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ বৃহস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষা শেষে মাসুদ বলে, ‘আমার হাত দিয়ে ভাই যদি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে, তবে শান্তি পাব।’

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিরের কাছে ইচ্ছার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, ‘লেখাপড়া করে চাকরি পেলে মা-বাবাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারব। তাঁদের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করব।’