[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কুমিল্লার শতবর্ষী মাছের মেলায় বর্ষবরণে ক্রেতার ঢল

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি কুমিল্লা

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজার ও এর আশপাশের সড়কে বসেছে কাতলা মাছের মেলা। কাতলা মাছের মেলা হলেও অন্যান্য মাছও পাওয়া যাচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ বাজার। আজ সকাল ৯টায় বাজারে গিয়ে ভিন্ন এক চিত্র চোখে পড়ে। চারদিকে শুধুই মাছ আর মাছ। কাতলা মাছে সেজেছে সারি সারি মাছের দোকানগুলো। মূল বাজার ছাড়িয়ে পুরোনো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে মাছের মেলা।

প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে এখানে কাতলা মাছের মেলা বসে। এটি কুমিল্লার শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। মেলায় সারি সারি কাতলা মাছ থেকে মুগ্ধ হন ক্রেতারা। বিকিকিনিও হয় বেশ জমজমাট। এবারও রাজগঞ্জ বাজার ও এর আশপাশের সড়কে বসেছে কাতলা মাছের মেলা। মূলত কাতলা মাছের মেলা হলেও অন্যান্য মাছও পাওয়া যায়। এবার মেলায় মাছের ৮০ শতাংশই কাতলা। এই মেলা চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত। মেলাকে কেন্দ্র করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে রাজগঞ্জ বাজারে। রয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়ও।

মাছ বিক্রেতাদের ভাষ্য, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাতলা মাছ বেশি এসেছে মেলায়। কুমিল্লা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে মাছ নিয়ে আসেন শৌখিন বিক্রেতারা। ৩–২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ রয়েছে মেলায়। উৎপাদন খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে।

সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেলায় ঘুরে দেখা যায়, কোথাও পানির মধ্যে জীবিত কাতলা মাছ রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কোথাও ডালার মধ্যে মাছ লাফালাফি করছে। ডালার মধ্যে বড় বড় কাতলা মাছের সঙ্গে সাজানো আছে বড় আকারের রুই, মৃগেল ও কার্প মাছও। কাতলা মাছের কেজি সর্বোচ্চ ১ হাজার ১০০ টাকা; ১৫–২০ কেজি ওজনের মাছের দাম এটি। সর্বনিম্ন প্রতি কেজির দাম ৪০০ টাকা; সে ক্ষেত্রে মাছের ওজন ৩ কেজির মতো। আকারভেদে ক্রেতারা দরদাম করছেন। রুই মাছ ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। জীবিত মাছের দাম একটু বেশি। এর মধ্যে পুকুর-দিঘিতে চাষ হওয়া মাছের চাহিদা বেশি। আকারে খুব বেশি বড় না হলেও স্বাদ ভালো হওয়ায় এই মাছের দামও কিছুটা বেশি। মেলায় কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনীসহ যশোর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী থেকেও মাছ এসেছে।

অনেকে মেলা থেকে বড় মাছ কিনে আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠান। অনেকে মেলার মাছ দিয়ে অতিথি আপ্যায়নও করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজগঞ্জ বাজারে প্রায় ৪৫ বছর ধরে মাছ বিক্রি করেন আবুল হাশেম। তিনি  বলেন, ‘মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৩০০ মাছ বিক্রেতা এসেছেন। আকার ও ওজন অনুযায়ী মাছের দরদাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। এবারের মেলায় ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৮৫০–৯০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। ১০ কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি করছি ৭৫০–৮০০ টাকা দরে।’

চান্দিনা উপজেলার মোহনপুর থেকে কাতলা মাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন হরি দাস। প্রতিবছর মেলায় বিক্রির জন্য তিনি পুকুর ও দিঘিতে কাতলা মাছ চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধইরা এই মেলায় কাতলা মাছ বেচতাছি। এর আগে আমার বাপে ও দাদায় এই মেলায় মাছ বেচত। এইবার অনেক বেশি মাছ লইয়া মেলায় আইছি। আমার লগে আরও চাইরজন আইছে। সকাল ৮টা থাইক্কা বেচাবিক্রি শুরু করছি, ভালোই সেল ইইতাছে। আমি ১০ কেজি ওজনের কাতলা ৮০০ টাকা কেজি দরে বেচতাছি।’

এবার মাছের দাম অনেকটাই বেশি বলে মন্তব্য করেন ক্রেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গত পরশু যেই মাছ ৫৫০ টাকায় কিনেছি, সেই মাছ আজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। তবে এবার প্রচুর মাছ এসেছে, যার বেশির ভাগই কাতলা।’

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই মেলায় মাছ নিয়ে আসেন শৌখিন বিক্রেতারা। ৩-২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দীর্ঘদিন ধরে এই মেলায় মাছ কিনতে আসেন কুমিল্লা নগরের বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা শাহানুল হক। তিনি বলেন, ‘এই মেলায় এসে মাছ কেনা আমার শখ। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে পয়লা বৈশাখে এই মেলা থেকে মাছ কিনেছি। এবার ৩ হাজার ৪ টাকা দিয়ে প্রায় ৬ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি।’

এই মাছের মেলা কুমিল্লার ঐতিহ্যের অংশ বলে জানালেন কুমিল্লার ইতিহাস–গবেষক আহসানুল কবীর। তিনি প্রথম বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মেলা ঠিক কবে শুরু হয়েছিল সেটি নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এই মেলার বয়স শত বছরের বেশি এবং এটি কুমিল্লার ঐতিহ্য। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠানো হয় এবং অনেকে মেলার মাছ দিয়ে অতিথি আপ্যায়নও করেন। এই মেলায় একসময় শুধুই কাতলা মাছ উঠত। এখন অন্যান্য মাছও আসে; তবে অধিকাংশই কাতলা মাছ। কিছু মাছ ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা এই মেলায় বিক্রির জন্যই মাছ বড় করে থাকেন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন