[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মৌলভীবাজারে এত লেবু উৎপাদন, তবু দাম চড়া কেন?

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি মৌলভীবাজার

সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানে লেবু দেখছেন এক ক্রেতা। বিক্রেতাদের দাবি, দাম শুনেই কেনার আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল রাতে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রায় ৩০ বছর ধরে লেবু কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত মতিন মিয়া (৫৪)। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে লেবু বিক্রি করেন। কিন্তু এখন এক হালি (চারটা) লেবুর যে দাম চাইছেন, তাতে নিজের কাছেই বিস্ময় লাগছে। লেবুবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মতো গরিবে অখন লেবু খাইত পারত নায়। আমি বেচি, নিজে খাইতাম পারি না।’

গতকাল রোববার রাতে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনায় মতিন মিয়ার সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি ফুটপাত ঘেঁষে কয়েকটি টুকরিতে লেবু সাজিয়ে বসে ছিলেন। সেখানে খুব বেশি লেবু অবশিষ্ট নেই। অধিকাংশ লেবুর ত্বক হলুদ হয়েছে। অন্য সময় সবুজ লেবুর তুলনায় এগুলো প্রায় অর্ধেক কম দামে বিক্রি হতো। তবে মাঝারি আকারের এই হলুদ লেবুর দামই এখন চাওয়া হচ্ছে, ৬০ থেকে ৮০ টাকা হালি।

লেবুর এই অস্বাভাবিক দামের কারণ জানতে চাইলে জেলার একাধিক লেবু উৎপাদক ও বিক্রেতা বলেন, চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবেই লেবুর উৎপাদন কম। বাজারে তাই সরবরাহও কম। এ ছাড়া অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে লেবুর চাহিদা বাড়ে। এসব কারণে খুচরা পর্যায়ে দামটা দ্বিগুণের বেশি চাওয়া হচ্ছে। উৎপাদন এলাকা মৌলভীবাজারে লেবুর এমন দাম অনেককেই বিস্মিত করছে। দাম শুনেই বেশির ভাগ ক্রেতা লেবু না কিনে বাড়ি ফিরছেন।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোকামবাজারে বাসিন্দা ব্যবসায়ী মতিন মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গল থেকে এক বস্তা লেবু এনেছিলেন আড়াই হাজার টাকায়। এতে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারে ২৪২টি লেবু পেয়েছেন। এখন আকার অনুযায়ী ৪০-৮০ টাকা হালি দরে এসব বিক্রি করছেন। অথচ এক সপ্তাহ আগেও বড় আকারের লেবু হালিপ্রতি বিক্রি করেছেন ১৫-২০ টাকায়। এবার লেবুর দাম তাঁর কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছে।

এই দাম কেন বেড়েছে, অনেকক্ষণ ধরে তার ব্যাখ্যাও দেন মতিন। তিনি বলেন, ‘এমলান (এ রকম) এত দাম আগে অইছে না (হয়নি)। গত রোজায় মানুষ লেবু হস্তায় (সস্তায়) খাইছে, আমদা (প্রচুর) খাইছে। আর আমিও এতা (হলুদ রঙের) বেচছি না। ভালাতা (সবুজ রঙের) বেচছি। আসলে গাছে ফল (লেবু) নাই। কেউর বাগানে (লেবু বাগানে) আছে, কেউর বাগানে নাই। অখন বেচিয়া পোষায় না। এগুইন (বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা লেবু) বেচিয়া আর আনতাম নায় (আনব না)। আর কমলে আনমু (আনব)।’

গতকাল রোববার রাতে মৌলভীবাজার শহরের বড় দুই খুচরা বাজার ‘পশ্চিমবাজার’ ও ‘টিসি মার্কেট’ ঘুরে দেখা গেছে, যাঁরা অন্য সবজির সঙ্গে নিয়মিত লেবু বিক্রি করেন, তাঁদের অনেকের কাছেই লেবু নেই। কয়েকজনের কাছে আছে, তা–ও অল্প পশ্চিমবাজারেও একই অবস্থা। আগে রাস্তার পাশে, মূল বাজারে প্রচুর লেবু সাজিয়ে রাখতেন বিক্রেতারা। এখন মাত্র কয়েকজনের কাছে লেবু আছে। তাঁদের কাছে আবার দাগঅলা ও ছোট আকারের লেবু আছে।

পশ্চিম বাজারের একটি টুকরিতে কিছু বড় আকারের লেবু রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিক্রেতা বলেন, তিনি ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০০টি লেবু কিনেছেন। প্রতিটি লেবুর দাম পড়েছে ২২ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে বড় আকারের লেবুর হালি পাওয়া গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। বড়গুলো হালিপ্রতি তিনি বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

এ বাজারে অনেক ক্রেতা এসে লেবুর দাম জিজ্ঞেস করছেন, কিন্তু দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। একজন ক্রেতা একটি লেবু কিনে নিয়ে যান। পশ্চিমবাজারে ফুটপাত ঘেঁষে টুকরিতে লেবু সাজিয়ে বসে ছিলেন বাতির উল্লাহ। তাঁর দোকানে লেবু কিনতে এসেছিলেন পিয়ারু নামের স্থানীয় এক ক্রেতা। বিক্রেতার কাছে লেবুর দাম শুনেই তিনি দ্রুতই জায়গা ছেড়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘লেবুর এত দাম জীবনে শুনছি না।’

বিক্রির জন্য ফুটপাত ঘেঁষে লেবু নিয়ে বসেছেন একজন বিক্রেতা। গতকাল রাতে মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়ার লেবু উৎপাদক জনক দেববর্মা বলেন, ‘এখন গাছে লেবু নাই। এখন প্রাকৃতিকভাবেই লেবুর উৎপাদন কম। এখন সবাই (চাষি) বাগান পরিচর্যা করছে। পানি ও গোবর দিচ্ছে। যারা রোজার জন্য কিছু স্টক করেছিল, সেই লেবুই পাওয়া যাচ্ছে। এ রকম চাষির সংখ্যাও বেশি না, ১০ থেকে ১৫ জন হবে। আমার বাগানে এখন লেবু নাই। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। আশা করছি, এক মাস পর প্রচুর লেবু বাজারে চলে আসবে।’

মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়ে থাকে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন প্রজননের সময় না, লেবুগাছ পরিচর্যার সময়। দাম বেশি, তারপরও কিছু লেবু পাওয়া যাচ্ছে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন