[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ধুলা উড়িয়ে ঘোড়া ছুটছে সুখছড়ির বিলে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি লোহাগাড়া

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামের সভার বিলে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। রোববার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বড় বিলের দুই পাশে সারি করে দাঁড়িয়েছেন দর্শকেরা। মাঝে ধান কেটে ফেলার পর শুকনা নাড়া জেগে থাকা অসমান মাঠ। তার ওপর দিয়ে ধুলা উড়িয়ে একের পর এক ছুটে যাচ্ছে ঘোড়া। কোনোটি ধবধবে সাদা, কোনোটি লাল। একটা ঘোড়া ছুটে যেতেই উল্লাসে ফেটে পড়ছিলেন দর্শকেরা।

গতকাল রোববার বিকেল ৫টা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নিচ্ছে শীত। বিকেলের মিঠে রোদে বিস্তীর্ণ মাঠে জমায়েত হয়েছেন হাজারো মানুষ। তাঁদের মধ্যে আছেন নারী ও শিশু থেকে শুরু করে নানান বয়সী মানুষ। সবাই এসেছেন এ অঞ্চলের ১২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ি গ্রামের সভার বিলে প্রতিবছর মাঘের শেষ সপ্তাহে আয়োজিত হয় এই ঘোড়দৌড়। শতবর্ষী এই ঘোড়দৌড় দেখতে গতকালও অন্তত তিন হাজার মানুষ হাজির হয়েছিলেন। ঘোড়দৌড় উপলক্ষে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছিল গ্রামীণ মেলা। মাটির জিনিস, খেলনা, মিঠাই, তেলেভাজা দোকান বসে গিয়েছিল সারি সারি। সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ ছিল গ্রামজুড়ে।

রেওয়াজ অনুযায়ী এই ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণকারী সবাই পুরস্কার, মানে নগদ টাকা পান। তবে স্মারক হিসেবে টাকার সঙ্গে প্রথম তিনজনকে দেওয়া হয় বালতি।

কীভাবে এই ঘোড়দৌড়ের শুরু, জানতে চাইলে আয়োজকেরা জানান, ছৈয়দ মোফাজ্জলুর রহমান বা বড় মাওলানা নামের একজন আলেম ১২৯ বছর আগে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলার প্রবর্তন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরও গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে ঘোড়দৌড়কে নতুন প্রজন্মের কাছে টিকিয়ে রাখতে তাঁরা প্রতিযোগিতাটি বছরের পর বছর চালু রেখেছেন।

 রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লাল ও সাদা রঙের ৮টি ঘোড়া সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাঁশি বাজতেই প্রাণপণ ছুটে চলে ঘোড়াগুলো। এ সময় উপস্থিত থাকা হাজারো দর্শনার্থীর হই-হুল্লোড় ও হর্ষধ্বনি চারপাশ মুখর করে তোলে। ৫০০ মিটার ৩ ধাপে দৌড়ের পর থামে ঘোড়াগুলো।

বাচ্চাদের নিয়ে ঘোড়দৌড় দেখতে আসা এনামুল হক বলেন, ‘ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এমন আয়োজনে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে আবেগাপ্লুত হয়েছি। এ প্রতিযোগিতা দেখে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য মনে পড়ে গেল। এমন আয়োজন যুগের পর যুগ প্রচলিত থাকুক।’

ঘোড়দৌড় পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা পরিচিত করতে প্রতিবছর এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন লোহাগাড়া থানার ওসি (তদন্ত) রবিউল ইসলাম ও ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন