[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ইউএসএআইডির কাজ স্থগিতে বাংলাদেশে কী প্রভাব

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিতের কারণে গতি হারাবে নারীশিশুদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প | ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশে সরকারি খরচ বন্ধে নিয়েছেন উদ্যোগ; তাতে ইউএসএইডির কার্যক্রম হয়েছে স্থগিত। এই সংস্থাটির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

ফলে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ার কথা। কেননা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নানা প্রকল্পে ইউএসএআইডির মাধ্যমে অর্থ সহায়তা আসে। এর মধ্যে বড় অনুদান আসে রোহিঙ্গাদের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বলেই মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলছেন, উন্নয়নে বিশেষ করে কারিগরি সহায়তায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করছে, বাংলাদেশের এর বড় কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা কার্যক্রমে সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ফেরার দিনই বিদেশে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এরপর বিবিসি খবর দেয় যে ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র তার সব বিদেশি সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই নির্দেশনা দূতাবাসগুলোতেও পাঠানো হয়।

সেই নির্দেশনায় ৯০ দিনের জন্য বিদেশে সব উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ রাখতে বলা হয়।

বিশ্বে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটি ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে এই খাতে।

তবে জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের সামরিক তহবিল এই স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে ফেরার দিন ২০ জানুয়ারি শতাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: রয়টার্স

শুক্রবার ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এইড পুনর্মূল্যায়ন এবং পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ জারি করেন।

এরপর শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইএসএআইডি) বাংলাদেশে কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তারা তাদের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে তা জানায়।

ইউএসএআইডি বাংলাদেশের পরিচালক  ব্রায়ান অ্যারন স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তীতে লিখিতভাবে না জানানো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

বাংলাদেশে গ্রামীণ নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইউএসএআইডি অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে | ছবি: সংগৃহীত

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, 'ইউএসএআইডিসহ সব সংস্থার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের কারিগরি, খাদ্য ও নগদ সহায়তা দিয়েছে। এরমধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সহায়তার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৮০ কোটি ডলার। এরপর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে এসেছে আরও প্রায় ১০ কোটি ডলার।'

সানেম’র নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, 'ইউএসএআইডিসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বাণিজ্যসহ অনেকগুলো খাতে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা রয়েছে। এরমধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান। এগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে নগদ সহায়তাটাই মূখ্য নয়। দেশটি আমাদেরকে কারিগরি এসব খাতেই কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে।' 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, 'আমরা যে সহায়তা পাই, তা বিশেষ করে এসব খাতে কারিগরি সহায়তা হিসাবেই পেয়ে থাকি। এখন উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যদি গুরুত্বপূর্ণ এসব খাত থেকে কারিগরি সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তা উদ্বেগজনক হবে বলে আমি মনে করছি।'

যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা স্থগিতের প্রভাবের বিষয়ে রোববার সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চেয়েছিল সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, 'এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কিছু এখনও জানানো হয়নি।'

সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এনিয়ে কথা বলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর। ইউএসএআইডির কার্যক্রম স্থগিতের ফলে কী ধরনের প্রভাব পড়বে- এই প্রশ্নে প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, 'ইউএসএআইডির মূল সাহায্য আসে রোহিঙ্গা নিয়ে। সাত বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি দিয়েছে। সরকার আশা করছে, এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। আর এটি (স্থগিত) ৯০ দিনের কথা বলা হয়েছে। আর বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি বড় কোনও প্রভাব ফেলবে না।'

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষায় সহায়তা দিয়ে আসছে ইউএসএআইডি | ছবি: সংগৃহীত

নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর তাদের জন্য অনুদান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য প্রায় ২০ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।  

২০১৭ সালের পর থেকে আঞ্চলিকভাবে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫০ কোটি ডলারের বেশি। এরমধ্যে বাংলাদেশেই দেওয়া হয়েছে ২১০ কোটি ডলারের বেশি।

উপ প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, 'ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় যাওয়ার পর ৯০ দিনের জন্য ইউএসএআইডির যাবতীয় সাহায্য পৃথিবীর সব দেশের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। তবে সেখানে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি ও রিসোর্সেস সরবরাহ করত, সেটি জারি থাকবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।'

 আরও পড়ুন

ইউএসএআইডির সব কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ

বিস্তারিত পড়ুন

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন