[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে হাজারী গুড়ের দাম

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ

হাজারী গুড় তৈরির পর সিল দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উত্তর গোপীনাথপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয় মানিকগঞ্জের হাজারী গুড়ের দাম ক্রমে ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ১ কেজি গুড় ২ হাজার ২০০ টাকায় কেনা অনেক ক্রেতার জন্য সম্ভব হয় না। নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্ত ক্রেতাদেরও কালেভদ্রে এ গুড় কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

গুড়ের এমন দামে অসন্তোষ প্রকাশ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মানিকগঞ্জ কমিটির সভাপতি সামছুন্নবী তুলিপ বলেন, হাজারী গুড় যে দরে বিক্রি হচ্ছে, তা অযৌক্তিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এই দরের কোনো ভিত্তি নেই। বিগত কয়েক বছরে রাতারাতি এই গুড়ের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। এই গুড়ের সহনীয় বাজারমূল্য প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা হওয়ার কথা ছিল। অথচ বর্তমানে ভোক্তাদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

সামছুন্নবী তুলিপ অভিযোগ করেন, হাজারী পরিবারের সদস্যরা এই গুড়ের স্বত্ব নিয়ে ব্যবসা করছেন। হাজারী গুড়ের সিল যদি হাজারী পরিবারের সদস্যদের বাইরে অন্য গাছিদের দেওয়া যেত, তাহলে দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকত। যেহেতু গুড়টি দিয়ে জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে, কাজেই উৎপাদনকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারদর জেলা প্রশাসনেরই নির্ধারণ করার কথা। তবে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই।

উত্তর গোপীনাথপুর গ্রামের গাছি আনোয়ার হোসেন বলেন, এই গুড়ের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে খেজুরগাছের রস। দিন দিন খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় রসের পরিমাণ কমে এসেছে। বেশি টাকায় রস কিনতে হচ্ছে। গাছিদের পারিশ্রমিকও বেড়েছে। এসবের তুলনায় এ গুড়ের দাম কমই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে সারি সারি খেজুরগাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলছে। গাছিদের কেউ কেউ রসভর্তি হাঁড়ি নামাচ্ছেন। এ গ্রামের তিন ভাই আনোয়ার হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মোজাফফর হোসেনের বাড়িতে শ্রমিকদের পাশাপাশি বাড়ির সদস্যদের হাজারী গুড় তৈরিতে ব্যস্ততা দেখা গেল।

কিছুক্ষণের মধ্যে মাটির জ্বলন্ত চুলার (গাছিদের ভাষায় বায়িং) ওপর বসানো তাফালে রস ঢালা হলো। একজন চুলা জ্বাল দিচ্ছেন, দুজন পাত্রের রস নাড়ছেন। এই কর্মযজ্ঞ চলল ২০ থেকে ২৫ মিনিট। পাত্রে জ্বাল দেওয়া রসের ঘনত্ব কিছুটা বেড়ে হালকা খয়েরি রং ধারণ করল। সঙ্গে সঙ্গে সেই রস মাটির পাত্রে ঢালা হলো। এরপর মোজাফফর ও তাঁর সহকারী বাঁশের কাঠি (নাড়ানি) দিয়ে জোরে নাড়তে থাকলেন জ্বাল হওয়া সেই রস। যত সময় যায়, রসের ঘনত্ব বাড়তে থাকে এবং কিছুটা সাদা হতে থাকে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট নাড়ার পর মোজাফফর তা ঘরের মেঝেতে রাখা ছোট ছোট পাত্রে ঢাললেন। এরপর বিশেষ এই গুড়ে হাজারী সিল বসানো হলো। এভাবেই তৈরি হলো এ দেশের ঐতিহ্যবাহী হাজারী গুড়। হরিরামপুরের বাল্লা, গোপীনাথপুর, কাঞ্চনপুর ও গালা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ৩০ থেকে ৩২টি গাছি পরিবার এই গুড় তৈরি করে আসছে।

গাছিদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন হাজারী গুড় কিনতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। চাহিদার পাশাপাশি এই গুড়ের দামও বেশ। মানিকগঞ্জ শহরের উত্তর সেওতা গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য হাজারী গুড়ের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। নিম্নবিত্ত মানুষ তো এই গুড় কেনার কথা ভাবতেও পারেন না।

খেজুরের রস জ্বাল দেওয়ার পর পাত্রে বিশেষ প্রক্রিয়ায় হাজারী গুড় তৈরি করা হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, হাজারী গুড়ের উৎপাদনপ্রক্রিয়া বিশেষ ধরনের, সাধারণ গুড়ের মতো নয়। প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন খরচ কত হয়, তা বিবেচনায় যুক্তিসংগত দাম হওয়া উত্তম। নতুন করে খেজুরগাছ রোপণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খেজুরগাছ বাড়লে রস বাড়বে এবং গুড়ের দামও কমে আসবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন