[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কুমিল্লার বানভাসিদের অনেকে এখনো আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি ভেঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে বন্যাকবলিত মানুষ। আজ সকালে গাজিপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কুমিল্লা: কুমিল্লার কিছু কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এখনো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাড়ি ছাড়ছেন বানভাসি মানুষ। আজ শনিবার সকালে বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেছে। অন্যান্য উপজেলার কিছু এলাকায় পানি কমে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে; তবে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট।

আজ সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ভরাসার, ইছাপুরা, ষোলনল, মহিষমারা, খাড়াতাইয়া, গাজীপুর ও বাকশীমূল এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, নিজেদের শেষ সম্বল নিয়ে শহর কিংবা উঁচু স্থানের দিকে ছুটছেন বানভাসি মানুষ।

তাঁদের একজন মহিষমারা এলাকার নাছরিন আক্তার। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁদের বসতভিটায় হাঁটুপানি ছিল। সকালে পানি বাড়তে থাকলে দুই সন্তান ও স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শহরের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

বসতভিটা ছেড়েছেন বাকশিমুল এলাকার সুজন মিয়াও। তিনি বলেন, ‘বাপ–দাদার ভিটা ছেড়ে আসতে কষ্ট হচ্ছে। জীবন বাঁচাতে আজ সবাইকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম।’

সুজনের কথা শেষ হওয়ার আগেই চোখেমুখে বিস্ময় নিয়ে তাঁর মা তাহিরুন্নেছা বলে ওঠেন, ‘বাপ রে, এত পানি জীবনেও দেহি নাই। আল্লায় আর কী কী দেহাইবো?’

অন্যদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণসহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

‘তিন দিন ধইরা এক বেলা ভাত খাইছি। বিস্কুট আর পানি খাইয়া থাকতাছি।’ কথাগুলো নাঙ্গলকোটের কাশিপুরের বাসিন্দা আবদুল মদুদের।

বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চলছে বলে জানান কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ মজুত আছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।’

পানিতে ডুবে আছে মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর বাজার। আজ সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জেলার ত্রাণ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার ১৪ উপজেলায় ৭ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন; যদিও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।

এদিকে বুড়িচংয়ে গোমতীর ভাঙনের কারণে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। লোকালয়ে প্রবেশ করা পানির স্রোতে অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ।

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সম্প্রতি কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে ভেঙে যায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ। তারপর এই তিন দিনে প্লাবিত হয় অন্তত ৩৫টি গ্রাম।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, ‘কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১১৮টি ইউনিয়নের ৭ লাখের বেশি মানুষ। আমরা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছি। সহায়তা অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’

বন্যাকবলিত এলাকায় ২২৭টি চিকিৎসক দল কাজ করছে বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন