[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাতিঘরে মুক্ত আলাপন, গান ও বর্ষা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

 

বাতিঘরের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বাতিঘরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: অনুষ্ঠান শেষে ঘোষণা এল, ‘যে ছেলেটা এতক্ষণ শুধু গিটার বাজালেন, তাঁর নাম রিপন কুমার। শেষ পরিবেশনা হিসেবে তাঁর কণ্ঠে এবার আমরা একটা বর্ষার গান শুনব।’ রিপন শুরু করলেন, ‘আষাঢ় মাইসা ভাসা পানি রে...’।

গানটি শেষ হলো, কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হলো না। তিন ঘণ্টা আগে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান চলল আরও প্রায় দুই ঘণ্টা। কারণ, গান শেষের আগেই বাইরে ঝুম বৃষ্টি নামে। মনে হলো তখনই শুরু হলো আসল অনুষ্ঠান। জমে উঠল লেখক-পাঠক-কবি-শিল্পীদের আড্ডা।

 শুক্রবার রাতে রাজশাহী বাতিঘরে এমন আড্ডা জমে ছিল। প্রতিষ্ঠানটির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘মুক্ত আলাপ ও গান’ শিরোনামে বিকেল থেকে চলে এ অনুষ্ঠান। কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজ, কবি শামীম হোসেন, মাহী ফ্লোরা তখন অন্য রকম আড্ডায় মেতে ওঠেন।

কবি মঈন শেখ সেই দুপুরে এসেছেন। তিনি একবার আলোচনায় কান পাতছেন, আবার দরজার কাছে গিয়ে বৃষ্টি থামল কি না দেখছেন। কিন্তু বৃষ্টি ছাড়ছেই না। গল্পকার নিরমিন শিমেশ লেখকদের সঙ্গে হাই-হ্যালো করে ভিজেই গাড়িতে উঠলেন।

কথা বলছেন বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অনুষ্ঠান ঘোষণায় ছিলেন বাতিঘরের কর্মকর্তা কবি জাফর আহমদ রাশেদ ও আবৃত্তিকার মনিরা রহমান। বিকেল পাঁচটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। কুশল বিনিময়, চা চক্র আর আড্ডায় ঘণ্টাখানেক সময় চলে গেল। তারপর মঞ্চ থেকে অনুষ্ঠান শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল। শিল্পী নিবেদিতা চ্যাটার্জি ও অনিক রায়ের বর্ষার গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

গানের পর কথা বলার জন্য ডাক পড়ল বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাসের। তিনি শোনালেন চট্টগ্রাম থেকে কীভাবে বাতিঘর রাজশাহীতে এল। তিনি বলেন, ‘যখন বই পড়ার পাঠক কমে আসছিল, ঠিক তখনই বাতিঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পাঠককে বইমুখী করার আন্দোলন এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’

দীপঙ্করের কথার প্রতিফলন পাওয়া গেল তরুণ কবি লগ্ন যখন বলেন, ‘প্রতিদিন আমি বাতিঘরে আসি, প্রতিদিনের স্মৃতি আমি আলাদা করে জমিয়ে রাখি। কোনো নোট রাখি না। কিন্তু সব আমার মনের মধ্যে জমা থাকে। পরের দিন এসে সেই স্মৃতি নিয়ে আমি আবার বই খুলে বসি।’

কবি রুহুল আমিন প্রামাণিক তাঁর বক্তব্যে দীপঙ্করকে ‘তীর্থঙ্কর’ উপাধি দিলেন। কথা বলেন লেখক, অনুবাদক ও চিকিৎসক ইমরান আহমেদ। কথার ফাঁকে ফাঁকে ছিল গানের আয়োজন। অনিক রায় গাইলেন, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি...।’

বর্ষার গান করছেন কণ্ঠশিল্পী নিবেদিতা চ্যাটার্জি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কথা বলেন ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও লেখক শাকিল রেজা ইফতি। তিনি তাঁর বাতিঘরে আসার গল্প বলে সবাইকে উজ্জীবিত করেন। মাইশা মরিয়ম মাউথ অর্গানে বাজালেন, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা...।’ এই সুরের সঙ্গে গলা মেলালেন ঘরভর্তি দর্শকেরা। বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘এই শহরে ঢুকতেই আমি মুগ্ধ হতে শুরু করি। বাতিঘরে এসে এত রাত পর্যন্ত এত দর্শক দেখে আমার মুগ্ধতা আর কাটছে না।’ তিনি সবাইকে বইমুখী হওয়ার আহ্বান জানান।

কথার ফাঁকে আবার ভিন্ন আয়োজন। অরূপ ব্যানার্জি গাইলেন, ‘ছায়া ঘনায়েছে বনে বনে...।’ তাঁর সঙ্গে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা ‘অবনী বাড়ি আছো’ আবৃত্তি করলেন জয় কুমার সাহা। এ ছাড়া কথা বলেন গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী। কবি জয় গোস্বামীর ‘মেঘ বালিকা’ কবিতা আবৃত্তি করেন শরিফ আহমেদ ও কবি আবুল হাসানের ‘বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসা’ আবৃত্তি করেন মনিরা রহমান।

সবচেয়ে মজার পর্বটি ছিল উপস্থাপক দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে তুবা নামের একটি মেয়েকে মঞ্চে ডাকলেন। একই সঙ্গে ডাকলেন কবি আলতাফ শাহনেওয়াজকে। কথা বলতে বললেন তুবাকে। তিনি সদ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

তুবা কোনো কথা বলতে চান না। শুধু বললেন, ‘আমি এখন যাই।’ এ নিয়ে দর্শকদের হাসির রোল পড়ে গেল। বক্তা কোনো কথা বলতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত উপস্থাপক তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘কেন এসেছেন বাতিঘরে?’ এবার তুবা জানান, ৯ দিন হলো রাজশাহীতে এসেছেন। তার মধ্যে পাঁচ দিনই বাতিঘরে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ না পেয়ে মন খারাপ হয়েছিল। রাজশাহীতে বাতিঘর পেয়ে মন ভালো হয়ে গেছে।

কথা বলছেন প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এবার পাশ থেকে আলতাফ শাহনেওয়াজ বলতে শুরু করেন, ‘আগে শহরে একধরনের মানুষ থাকতেন, যাঁরা লেখালেখির চর্চা করতেন, তাঁদের পরিচর্যা করতেন। ২০১০ সালের পর থেকে তাঁদের আর দেখা যায় না। এখন বাতিঘর সেই কাজটি করছে।’ অনুষ্ঠান শেষে বৃষ্টি থামছে না দেখে কবি মঈন শেখ বলেন, ‘আমরা আসলে বর্ষা উদ্‌যাপন করতে এসেছিলাম।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন