[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রঘু রাইয়ের আলোকচিত্র প্রদর্শনী: বাঙালির গৌরবময় সংগ্রামের মহাকাব্যিক দৃশ্যমালা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

খ্যাতিমান আলোকচিত্রী রঘু রাইয়ের ‘রাইজ অব আ নেশন’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের সময়ের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অতিথিরা। রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিনিধি: সাদাকালো ছবিটি নির্বাক। কিন্তু কণ্ঠস্বরের চেয়ে যেন বেশি তীব্র শিশুটির আর্তনাদের এই ছবি। তার উদোম গা। গলায় মাদুলি ঝোলানো। বয়স হবে বড়জোর তিন-চার বছর। অশ্রু টলমল করেছে বিস্ফোরিত দুই চোখে। হাড়–জিরজিরে চেহারা। চিৎকার করছে শিশুটি। ক্ষুধার যন্ত্রণায়। ভারতে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তু বাংলাদেশি কোনো এক মায়ের এই ক্ষুধার্ত শিশুর ছবি তুলেছিলেন বিখ্যাত আলোকচিত্রী রঘু রাই।

ভারতের দ্য স্টেটমেন্ট পত্রিকার প্রধান আলোকচিত্র সাংবাদিক রঘু রাই মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের আশ্রয়শিবির ঘুরে ঘুরে উদ্বাস্তু বাংলাদেশিদের অবর্ণনীয় কষ্টের জীবনযাত্রা তুলে ধরেন তাঁর ক্যামেরায়। পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দৃশ্য এবং চূড়ান্ত বিজয়ের পর বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের দেশে ফেরা ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্যও তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। তাঁর তোলা ছবিগুলো একদিকে যেমন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল হয়ে আছে, তেমনি ছবিগুলো ব্যক্তিগতভাবে তাঁকেও আলোকচিত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে।

রঘু রাইয়ের তোলা ৫৩টি ছবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারির উভয় অংশে গতকাল রোববার শুরু হয়েছে ‘রাইজ অব আ নেশন’ নামের বিশেষ প্রদর্শনী। চারুকলা অনুষদের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহায়তায়। প্রদর্শনীটি কিউরেটিং করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জিহান করিম। প্রদর্শনী চলবে ১৯ মে পর্যন্ত, প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা অবধি সবার জন্য খোলা থাকবে।

রোবার দুপুরে চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের কষ্টকর জীবনযাত্রা যাঁরা দেখেননি, এই সব ছবি দেখলে তাঁরা অনুভব করতে পারবেন, কতটা অবর্ণনীয় কষ্ট নেমে এসেছিল বাংলাদেশের মানুষের জীবনে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হক।

দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দুর্জয় রহমান জানান, চার বছর ধরে তিনি ছবিগুলো সংগ্রহ করছেন। রঘু রাইয়ের কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন নিয়েছেন। ‘রাইজ অব আ নেশন’ নামের একটি বই প্রকাশনার কাজ চলছে। সেখানে প্রায় ১৫০টি ছবি থাকবে। সেখান থেকে বাছাই করে ৫৩টি ছবি নিয়ে এই প্রদর্শনী করা হচ্ছে স্বাধীনতার ৫৩ বছরকে স্মরণ করে। এর অনেক ছবিই দেশে আগে প্রদর্শিত‍ হয়নি।

কিউরেটর জিহান করিম প্রদর্শনীতে ছবিগুলোর উপস্থাপনা সম্পর্কে বলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন। সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘ছবিগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সময় ও বাস্তবতাকে শিল্পসম্মতভাবে ধারণ করে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে কালজয়ী হয়ে উঠেছে এসব ছবি।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন