[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

এমপির ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনবারের চেয়ারম্যান

প্রকাশঃ
অ+ অ-

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. বাকি বিল্লাহ। আজ রোববার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. বাকি বিল্লাহ। আজ রোববার দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাকি বিল্লাহ অভিযোগ করেন, পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. মকবুল হোসেনের ছেলে ও উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী মো. গোলাম হাসনায়েন ভোটের মাঠে প্রভাব খাটাচ্ছেন। নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোয় হাসনায়েনের বাইরে কেউ ভোটের মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় ভোটের লড়াই থেকে সরে যাচ্ছেন তিনি।

২১ মে দ্বিতীয় ধাপে উপজেলাটিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে একজন প্রার্থী সরে যাওয়ায় সংসদ সদস্যপুত্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রইলেন জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম মেছবাহুর রহমান। উপজেলাটিতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে এই প্রার্থীরও নানা অভিযোগ আছে।

২০০৯ সাল থেকে তিন মেয়াদে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন মো. বাকি বিল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গোলাম হাসনায়েন তাঁর (বাকি বিল্লাহ) কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করছেন। হামলা–মামলার ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। এতে নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সে জন্য তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাবা সংসদ সদস্য, ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন পরিবারতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মতো নেতাদের আর জায়গা থাকে না। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের পরামর্শেই নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসন থেকে মো. মকবুল হোসেন টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর বেশ প্রভাব আছে। সংসদ সদস্যের মেয়াদকালে তাঁর বড় ছেলে গোলাম হাসনায়েন পর পর দুবার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গোলাম হাসনায়েন উপজেলা আওয়ামী লীগেরও শীর্ষ পদে আছেন। ফলে বাবার সঙ্গে নিজেও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন।

উপজেলা নির্বাচনের আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী এম মেছবাহুর রহমান একই ধরনের অভিযোগ করে বলেন, ‘যখন প্রচারণায় যাচ্ছি, তখন একটি চক্র হুমকি দিচ্ছে। দল চেয়েছিল এবারের নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও দলের নেতা-কর্মীরা ভয়ের মধ্যে আছে। এমপি–পুত্র নির্বাচন করায় এখানে ভোট উৎসমুখর হবে না বলেই মনে হচ্ছে।’

তবে দুই প্রার্থীর অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসনায়েন। তিনি বলেন, ‘শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে চলবে না। হুমকির কথা বললে প্রমাণ থাকতে হবে। আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। বাবার পরিচয়ে রাজনীতি করি না। তিনিও আমার পক্ষে কোনো দিন কিছু বলেন না। আমি জনগণের ভোটেই দুবার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। ভাঙ্গুড়ার উন্নয়নে কাজ করেছি। জনগণের চাওয়াতেই এবার উপজেলা নির্বাচন করছি। অন্যদিকে বিভিন্ন অপকর্মের কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী বাকি বিল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। ফলে নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে তিনি বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন।’

সম্প্রতি উপজেলাটিতে ঘুরে দেখা গেছে, গোলাম হাসনায়েন উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকেই নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই তাঁর সঙ্গে। প্রচারণার ক্ষেত্রেও বেশ সরব তিনি।

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলনবিল–বিস্তৃত উপজেলাটি দুগ্ধশিল্প ও কৃষিনির্ভর। অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। রাজনীতির চেয়ে জীবন-জীবিকার ভাবনা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন।

উপজেলার পার ভাঙ্গুড়া গ্রামের কৃষক আবদুল আওয়াল বলেন, ‘আমরা রাজনীতি বুঝিনে, পেটের তাগিদি মাঠে-ময়দানে খাটে খাই। ভোটের দিন পরিবেশ ভালো থাকলি ভোট দিবের যাবোনে। নাহলি যাবোনানে।’

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম বলেন, এমপি-মন্ত্রীর স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন কোনো নির্দেশনা তাঁরা পাননি। এবার দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোট হচ্ছে। ফলে দেশের নাগরিক হিসেবে যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। তবে দলীয় কোনো লিখিত নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত এলে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলায় মোট ভোটার আছেন ১ লাখ ৩ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার আছেন ৫১ হাজার ৭৭৮ জন ও নারী ভোটার ৫১ হাজার ৪১২ জন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন