[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

তাঁরা বর্ষবরণে এসেছিলেন অনেক রকম গল্প নিয়ে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

তিন বিদেশি সুর তুলছিলেন বাংলা গানের। (বাঁয়ে) মারতা বেলনি। সাতক্ষীরায় একটি প্রকল্পের কাজে দুই মাস আগে বাংলাদেশে আসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সাদিয়া মাহ্‌জাবীন ইমাম: ছয় দিনের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা আজও অনেকটা ফাঁকা। এর ওপর আজ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে রমনায় প্রবেশের পথগুলোর বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টনী। ফলে রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যাঁরাই এসেছেন, তাঁদের হাঁটতে হয়েছে অনেকটা পথ। এর মধ্যেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জমেছে। তাঁদের কেউ কেউ অন্য ভাষায় জানিয়েছেন নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের মুখোমুখি মাদুরে বসা শত মুখের ভেতর দেখা গেল এক নারী গান শুনতে শুনতে নিজের হাঁটুতে আঙুল দিয়ে তাল তুলছেন। ফরাসি এই নারী বাংলা বুঝতে পারেন কি না, জানতে চাইলে জানালেন, ছয় মাস হলো বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলা শুনতে শুনতে এখন কিছু কথা বুঝতে পারেন। তবে গানের কথা শুনে বুঝতে শেখেননি এখনো। বেন ই নামে এই নারীর কিন্তু বাংলা এই গানগুলোর সুর ভালো লাগছিল। তবে আজকের দিনটির জন্য তিনি দুটি শব্দ শিখে এসেছেন। স্পষ্ট বাংলায় বললেন, শুভ নববর্ষ।

বেন ই এটুকু বাংলা জানলেও ইতালির নাগরিক মারতা বেলনি এক বর্ণ বাংলা বোঝেন না। ইংরেজিও বলেন অন্য রকম করে। মারতা এসেছিলেন তাঁর আরও দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে। জানালেন, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কাজে দুই মাস আগে বাংলাদেশে এসেছেন। গত রাতে ঢাকায় ফিরেই ভোরে চলে এসেছেন বর্ষবরণের আয়োজনে। মজার ব্যাপার হলো, বাংলা না বুঝলেও শিল্পীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা উচ্চারণ করতে চাইছিলেন এই তিন বিদেশি। হাত নাড়ানোর ধরনে মনে হতে পারে, যেন সব কথা অনুভব করছেন তাঁরা। আসলে তাঁদেরও ভালো লাগছিল সুর। জানালেন, রমনার গাছগুলো সুন্দর।

এদিকে প্রবেশপথের কাছে চত্বরের ভেতর গাছের তলায় তখন এক আত্মীয়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে গায়ত্রী চৌধুরী। চুড়ি থেকে টিপ—কোনো কিছুতে তার সাজের কমতি নেই। গায়ত্রীর বয়স মাত্র চার মাস। ছবি তোলার অনুমতি চাইতে গেলে এগিয়ে এলেন গায়ত্রীর মা পাপড়ি দাস। পেশায় তিনি চিকিৎসক। জানালেন, তাঁরা থাকেন চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িতে। ঢাকায় এসেছেন বেড়াতে। মেয়ের এই স্মৃতি থাকবে না, তবে বড় হয়ে ছবি দেখে সে জানবে এত অল্প বয়সেও তাকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে রমনায় নিয়ে আসা হয়েছিল। তাই গরম, পথশ্রম উপেক্ষা করেই ঠিক চলে এসেছেন এ আয়োজনে।

চার মাসের গায়ত্রী চৌধুরী এসেছে চট্টগ্রাম থেকে। যদিও সে ঘুমিয়েছিল, তবে স্মৃতি থাকবে ছবিতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চত্বরের ভেতর দেখা কথাসাহিত্যিক দুই বন্ধু শাহনাজ মুন্নী আর নাহার মনিকার সঙ্গে। কানাডাপ্রবাসী নাহার মনিকা বললেন, ৩০ বছর পর তিনি রমনা বটমূলের বর্ষবরণে এসেছেন। এই তিন দশকে বদলেছে অনেক কিছু। তিনি বলছিলেন, আয়োজনের ভেতরের চেয়ে বাইরের পরিবর্তনটা বেশি চোখে পড়ছে।

এদিকে বেলা বাড়ায় যখন ভিড় জমেছে, তখন দেখা গেল একটা আন্তরিক দৃশ্য। নীলাঞ্জনা অদিতি এসেছেন তাঁর মা চিত্রা সরকারের সঙ্গে। কিন্তু চিত্রা সরকার মাটিতে বসতে পারেন না হাঁটুর ব্যথায়। তাই তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বেষ্টনীর বাইরে। আর মেয়ে ঢুকে গিয়েছেন বাঁশ দিয়ে বাঁধানো বেষ্টনীর ভেতরে। এভাবেই পুরো অনুষ্ঠান দেখেছেন মা আর মেয়ে দুই জায়গা থেকে। সমস্যাটা হলো, বের হওয়ার সময়। নীলাঞ্জনার পায়ে সামান্য সমস্যা আছে বলে হাঁটতে হয় সামান্য সময় নিয়ে। অনুষ্ঠান শেষে মাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না নীলাঞ্জনা। মুঠোফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন একটু ভাবনায় পড়ে গেলেন মেয়েটা।

সব গুটিয়ে বের হয়ে আসার সময় ভিড়ের ভেতর বেষ্টনীর এপাশে মেয়ে আর ঠিক সমান্তরালে ওপাশে মা দাঁড়িয়ে। ঠিক একই সময়ে দুজন চলছিলেন পাশাপাশি। মাকে দেখেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নীলাঞ্জনা বললেন, ‘মা, আমি তো তোমাকে খুঁজছিলাম। তুমি গান শুনেছ?’ বেষ্টনীর ওপাশ থেকে মেয়েকে স্পর্শ করে আশ্বস্ত করলেন মা। তাঁরা দুজন মিশে গেলেন ভিড়ের ভেতর। রমনাজুড়ে তখন এমন অসংখ্য মানুষের অগুনতি গল্পের ভেতর দিয়ে বরণ করা হচ্ছে বাংলা নতুন বছরের প্রথম সকালটা।

চত্বরের ভেতর দেখা কথাসাহিত্যিক দুই বন্ধু শাহনাজ মুন্নী আর নাহার মনিকার সঙ্গে। কানাডাপ্রবাসী নাহার মনিকা বললেন, ৩০ বছর পর তিনি রমনা বটমূলের বর্ষবরণে এসেছেন। এই তিন দশকে বদলেছে অনেক কিছু। তিনি বলছিলেন, আয়োজনের ভেতরের চেয়ে বাইরের পরিবর্তনটা বেশি চোখে পড়ছে।

এদিকে বেলা বাড়ায় যখন ভিড় জমেছে, তখন দেখা গেল একটা আন্তরিক দৃশ্য। নীলাঞ্জনা অদিতি এসেছেন তাঁর মা চিত্রা সরকারের সঙ্গে। কিন্তু চিত্রা সরকার মাটিতে বসতে পারেন না হাঁটুর ব্যথায়। তাই তিনি দাঁড়িয়েছিলেন বেষ্টনীর বাইরে। আর মেয়ে ঢুকে গিয়েছেন বাঁশ দিয়ে বাঁধানো বেষ্টনীর ভেতরে। এভাবেই পুরো অনুষ্ঠান দেখেছেন মা আর মেয়ে দুই জায়গা থেকে। সমস্যাটা হলো, বের হওয়ার সময়। নীলাঞ্জনার পায়ে সামান্য সমস্যা আছে বলে হাঁটতে হয় সামান্য সময় নিয়ে। অনুষ্ঠান শেষে মাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না নীলাঞ্জনা। মুঠোফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন একটু ভাবনায় পড়ে গেলেন মেয়েটা।

নীলাঞ্জনা আর তাঁর মা চিত্রা সরকারের দেখা হয়েছিল বেষ্টনীর দুই পাশে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সব গুটিয়ে বের হয়ে আসার সময় ভিড়ের ভেতর বেষ্টনীর এপাশে মেয়ে আর ঠিক সমান্তরালে ওপাশে মা দাঁড়িয়ে। ঠিক একই সময়ে দুজন চলছিলেন পাশাপাশি। মাকে দেখেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে নীলাঞ্জনা বললেন, ‘মা, আমি তো তোমাকে খুঁজছিলাম। তুমি গান শুনেছ?’ বেষ্টনীর ওপাশ থেকে মেয়েকে স্পর্শ করে আশ্বস্ত করলেন মা। তাঁরা দুজন মিশে গেলেন ভিড়ের ভেতর। রমনাজুড়ে তখন এমন অসংখ্য মানুষের অগুনতি গল্পের ভেতর দিয়ে বরণ করা হচ্ছে বাংলা নতুন বছরের প্রথম সকালটা।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন