[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: ইফতার-সেহরিতে যা খাচ্ছেন মেসের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সে ইফতারে ভরসা শুধু ছোলা ও মুড়ি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আতিক হাসান শুভ: কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেস জীবন শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। মেসের জীবনে প্রতি পদে পদে সংগ্রাম, ত্যাগ ও স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর জন্য মেস জীবন সুখকর নয়। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে মেসের শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। রোজায় মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা ইফতারি করেন শুধু ছোলা আর মুড়ি দিয়ে। খেজুর, ফলমূল বা বাহারি রকমের ইফতারি বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর নাগালের বাইরে। সেহরিতেও কোনও রকমে খাবার খেয়ে রোজা রাখছেন তারা।

গত কয়েকদিনে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল ও লক্ষ্মীবাজার সংলগ্ন কয়েকটি মেসে গিয়ে দেখা যায়— শুধুমাত্র ছোলা, মুড়ি আর ঠান্ডা পানি দিয়ে ইফতার করছেন মেসে থাকা একদল শিক্ষার্থী। তাদের বেশিরভাগই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী। সেহরির কথা জিজ্ঞেস করতেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, রোজা আমাদের জন্য ফরজ। সেহরিতে যা-ই খাই না কেন রোজা তো রাখতে হবে। তবে আমাদের খাওয়ার অবস্থা বলার মতো না। বেশিরভাগ সময় ডিম ভাজি বা শুধু সবজি দিয়ে ভাত খেতে হয়। অতিরিক্ত দামের কারণে মাছ-মাংস খুবই কম কেনা হয়।

মেসে ইফতার ও সেহরির কথা বলতে গিয়ে স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুব।তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না। তবুও বাসায় থাকাকালীন ভালোভাবে ইফতার ও সেহরিটা করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালাতে শিখেছি। আগে মেসে ভাড়া দিতাম ২৫০০ টাকা করে। জানুয়ারি মাস থেকে জনপ্রতি আরও ৩০০ টাকা বেড়ে মেস ভাড়া ২৮০০ টাকা দাঁড়িয়েছে। এদিকে সব জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। টিউশনি করে যা পাই তা দিয়ে ঠিকমতো মাস চলে না। এর মধ্যে যদি ভালো ইফতারি ও সেহরি করতে যাই— তাহলে মাসের শেষ দিকে না খেয়ে থাকতে হবে। এজন্য কোনোভোবে পেট ভরার জন্য ছোলা-মুড়ি দিয়ে ইফতার করি।

সেহরির বিষয়ে শিক্ষার্থী বলেন, সব সময় হালকা খাবার খেয়ে রোজা রাখা যায় না। সেহরিতে ভালো-মন্দ কিছু খেতে হয়। ২২ রোজা পর্যন্ত সেহরিতে কেবল দুই দিন মুরগি আর পাঁচ দিন মাছ খেয়েছি। বাকি দিনগুলোতে আলু ভর্তা, ডাল, ডিম ভাজি অথবা শুধু তরকারি— এসব দিয়ে ভাত খেয়েছি। আগে মিল রেট পড়তো ৩৫ টাকার মতো। সেই মিল রেট এখন ৫০ টাকার বেশি। কোনোভাবেই মিল রেট কমানো যাচ্ছে না। কারণ, সবকিছুর দাম বেড়েছে। রান্নার জন্য কোনও কিছুই কম দামে পাওয়া যায় না। আমরা মেসে মোট ৯ জন থাকি। সবাই চাকরির জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজে চলছে, আবার অনেকে পরিবারও চালায়। একটা নিম্নবিত্ত পরিবারেরচেয়েও করুণ অবস্থায় আছে মেসের শিক্ষার্থীরা।

একই মেসের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহাদাত হোসেন নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, মাস্টার্স শেষ হলো গত বছর। আপাতত চাকরির জন্য পড়াশুনা। বাবা মারা গেছেন ইন্টার পাস করার আগেই। তারপর থেকেই নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে বহন করছি। পাশাপাশি মা আর ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনার দায়িত্বও আমার। টিউশনি করে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে ঢাকা শহরে বেশ ভালোভাবে চলা যায়। কিন্তু আমি যদি ফুটানি করি, তাহলে তো আমার পরিবার চলবে না। এজন্য আমি ঢাকায় কী খাই না খাই এটা বাসায় বলি না। বাসা থেকে ফোন করলে বলি বেশ ভালো খাবার খেয়েছি। অথচ দেখা গেছে, আমরা প্রতিদিন কোনোভাবে ইফতার করি।

ইফতারে খেজুর বা অন্য কোনও ফল খাচ্ছেন কিনা, জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, এক পোয়া খেজুরের দাম (২৫০ গ্রাম) ১৮০ টাকা। আমরা মেসের সবাই দুইটা করে নিলেই শেষ। অন্য ফলের কথা বাদই দিলাম। এমন কোনও ফল নেই যেটার দাম কম। সব ফলের দাম বেশি। আমরা এখন বাসায় ইফতারের চিন্তা না করে সব সময় পরিকল্পনা করি— যেন মসজিদে বা অন্য কোনও জায়গায় ইফতার করা যায়। কারণ একদিন আগেও মুড়ির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা। বাসায় ছোলা ভাজি করার জন্য যখন তেল কিনতে যাই— তখন মনে হয় বাইরে থেকে ছোলা কেনাটাই ভালো। কোনও কিছু কিনে মেসের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যাচ্ছে না।

মেসে থাকা কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী যায়েদ হোসেন মিশু বলেন, নতুন বছরে বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়েছে। সবাইকে এখন মেসের ভাড়া ও খাবারের অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। ফলে মাস শেষে হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মেসের খাবারের তালিকা অনেক ছোট হয়ে গেছে। তবুও মাসের শেষ আট-দশ দিন আগেই সবার পকেট খালি হয়ে যায়। কোনোভাবেই খরচ কমানো যাচ্ছে না। মেসে খাওয়ার কষ্ট— বিষয়টি মিডিয়ায় আসবে মানুষ সহমর্মিতা জানাবে, এটা তো কোনও সমাধান না। অতিরিক্ত দ্রব্যমূলের কারণে শুধু যে মেসের শিক্ষার্থীরা কষ্টে আছে বিষয়টা এমন না— দেশের সব মানুষকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন