[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

চুয়াডাঙ্গায় আজ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

প্রকাশঃ
অ+ অ-

চুয়াডাঙ্গায় গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। জামার বোতাম খুলে ছাতা মাথায় গরু চরাচ্ছেন কৃষক মাতাহাব উদ্দীন। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার নেহালপুর গ্রামে কেরুর মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় আজ শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ১১ শতাংশ। পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বেলা তিনটায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এটিই চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত শনিবার মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল খুলনা বিভাগেরই আরেক জেলা যশোরে। ওই দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ভৌগোলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি। ফলে এই গ্রীষ্মকালে পুরো সময়টায় সূর্য চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর তাপ ফেলে। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলাগুলো সমতলভূমি। যে কারণে তাপমাত্রা সহজে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাপমাত্রার হাত থেকে রক্ষা পেতে হয় প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে জলাধার ও প্রচুর গাছপালা থাকতে হবে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা খেয়াল করছি যে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এপ্রিলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এ ছাড়া এ জেলায় পর্যাপ্ত জলাধার নেই। জলাধার থেকে পানি জলীয় বাষ্প আকারে ওপরে উঠে মেঘ তৈরি হয়। সে সময়ে শীতল পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এ জেলায় সে সম্ভাবনাও নেই।’

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের পর এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এতে চরম গরম অনুভূত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষ স্বস্তি পাচ্ছেন না। সবখানেই হাঁসফাঁস অবস্থা। কৃষি শ্রমিকসহ কর্মজীবী মানুষের অবস্থা কাহিল। রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলেও ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।

অতি তীব্র তাপদাহের মধ্যেই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ধান কাটছেন বৃদ্ধ নবীছদ্দিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার নাগদাহ-টাকপাড়া মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আজ বেলা দুইটার দিকে সদরের নেহালপুর গ্রামের রাস্তার পাশে গাছের নিচে ভ্যান রেখে জামা খুলে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন চালক আবদুর রহমান (৫৪)। চুয়াডাঙ্গা থেকে হিজলগাড়ি বাজারের একটি বেকারি কারখানায় ময়দার বস্তা নামিয়ে এসেছেন তিনি। আবদুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে ভ্যান চালাচ্চি। ইর আগে কখখনোই অ্যারাম গরম লাগিনি। এট্টুসখানি পত গাড়ি নি যাতি না যাতিই গরমে হাঁপিয়ে যাচ্ছি। জানের ভেতর ছটফট করচে। কিচুতিই শান্তি পাচ্চি নে।’

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহাতাব উদ্দিন বেলা আড়াইটার দিকে বাড়ির পাশেই কেরু অ্যান্ড কোম্পানির পরিত্যক্ত আখের জমিতে গরু চরাচ্ছিলেন। গায়ের জামাটির সব কটি বোতাম খোলা। মাথার ওপর ছাতা নিয়ে তাঁর নয়টি গরু তদারকি করছিলেন। মাহাতাব বলেন, ‘গরুগুনুর ঘাস খাইয়ে বাঁচানির জন্যি মাটে আইচি। এই খরার দিনি আমার ঘরিত্তি কিডা বেইর কত্তি পারে?’

সদর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নের কেষ্টপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক মকছেদ মণ্ডল (৮০) এই অসহনীয় গরমের ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর। দুনিয়াতে আমরা যত বাড়াবাড়ি কইরব, আমাদের ততই শাস্তি ভোগ কত্তি হবে। আমরা নিজিদির মতো করে সব ওলটপালট করচি। কেউ পুকুর ভরাট করচে, আবার কেউ কৃষিজমিতি পুকুর কাটচে। গাছ কাইটে ভাটায় পুড়ানো হচ্চে। আমাগের সুক কত্তি হলে সহ্য ও কত্তি হবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আতাউর রহমান মুন্সী বলেন, তাপপ্রবাহ দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে রোদে বের না হওয়াই ভালো। দিনে দুই থেকে তিনবার গোসল করতে হবে। অন্তত একটি করে মুখে খাওয়ার স্যালাইন (ওআরএস) খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করেই খাওয়া যাবে না। স্বাভাবিক হওয়ার পর খেতে হবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন