নির্বাচনের খরচ তুলতে চাওয়া সংসদ সদস্যের পক্ষে-বিপক্ষে নাটোরে কর্মসূচি, উত্তেজনা

সংসদ সদস্য আবুল কালামের সমর্থক নেতা–কর্মীরা র‍্যালি নিয়ে বাগাতিপাড়ার মালঞ্চি রেলগেট অতিক্রম করার সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। সোমবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খরচ করা ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা তুলতে চাওয়া নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালামের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে বাগাতিপাড়া উপজেলার মালঞ্চি রেলগেট ও বাজার এলাকায় এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে দুই পক্ষের কর্মসূচি শেষ হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালঞ্চি রেলগেট এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের সমর্থকেরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তাঁরা বর্তমান সদস্য আবুল কালামের সদস্যপদ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে মালঞ্চি বাজারে বর্তমান সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা পাল্টা কর্মসূচি পালন করেন। একই সময়ে একই এলাকায় দুই পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে সেখানে দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সাবেক সংসদ সদস্যের কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল ইসলাম (ঠান্ডু)। বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরিফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনছার আলী প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সংসদ সদস্য আবুল কালাম প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে নির্বাচনের খরচ তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি নির্বাচন কমিশনের আইন ও সংসদ সদস্যের শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাঁরা বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর সংসদ সদস্য পদ ও আওয়ামী লীগের পদ বাতিলের দাবি জানান।

সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের মানববন্ধন। সোমবার দুপুরে উপজেলা সদরের মালঞ্চি রেলগেট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অন্যদিকে মালঞ্চি বাজারে দলীয় কার্যালয়ে কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আবুল কালাম। তবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে তিনি কথা বলেননি। অনুষ্ঠানে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাসিম মাহমুদ বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম মাদকসেবীদের মহারাজা। তিনি রাজাকারের সন্তান। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের ভাইকে দাঁড় করিয়ে নির্বাচিত করেছেন। ইউপি ও পৌরসভা নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিয়েছেন। তাই তাঁর কথায় কান না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাগাতিপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নান্নু খান বলেন, দুই পক্ষের কর্মসূচিতে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানা-পুলিশসহ পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুই পক্ষের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ লালপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আবুল কালাম। বক্তব্যের একপর্যায়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার পাঁচটা বছরের বেতন-ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না। আগামী দিনেও আমার থাকবে না। তবে এবার (সংসদ নির্বাচনে) ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এইটা আমি তুলব। যেভাবেই হোক। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’ তাঁর ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়।