ঈশ্বরদীতে পুতুল নিয়ে খেলতে খেলতে জামায় আগুন, দগ্ধ শিশুর মৃত্যু

রিয়া খাতুন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: মা–বাবা বাইরে কাজে গেছেন। বাড়ির দরজা ছিল তালাবদ্ধ। ভেতরে দুই ভাই–বোন খেলছিল। খেলতে খেলতেই একটি মাটির পুতুল তৈরি করে বোন। এরপর গ্যাস লাইটার জ্বালিয়ে পুতুলটি পোড়ানোর চেষ্টা করে। এতেই পরনের জামায় আগুন লাগে মেয়েটির। দরজা বন্ধ থাকায় তাকে উদ্ধার করতে প্রতিবেশীদের অনেক সময় নষ্ট হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামে। দগ্ধ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত ১২টার দিকে মেয়েটি মারা গেছে।

মেয়েটির নাম রিয়া খাতুন (১২)। সে ওই গ্রামের পিন্টু বিশ্বাস ও আলেয়া আক্তারের মেয়ে। রিয়া স্থানীয় দিয়ার সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিয়ার বাবা নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাকরি করেন। কাজের তাগিদে সকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর রিয়ার মা তাঁর কাজে চলে যান। এ সময় তিনি বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে যান। বন্ধ বাড়ির উঠানে রিয়া ও তার পাঁচ বছর বয়সী ভাই খেলতে শুরু করে। খেলার ছলেই রিয়া মাটি দিয়ে একটি পুতুল তৈরি করে। দুপুর ১২টার দিকে মেয়েটি গ্যাস লাইটার দিয়ে পুতুলটি পোড়ানোর চেষ্টা করে। এতে তার পরনের জামায় আগুন লেগে যায়।

এ সময় মেয়েটি চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। কিন্তু বাড়ির ফটকে তালা থাকায় তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে করতেই মেয়েটি গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে কিছুক্ষণ পরই মেয়েটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত ১২টার দিকে মেয়েটি মারা যায়।

নিহত রিয়ার ফুফাতো ভাই সৌরভ হোসেন জানান, কাজের তাগিদে মাঝেমধ্যে রিয়ার মা–বাবাকে বাইরে যেতে হয়। বেশির ভাগ সময় রিয়ার মা দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। ঘটনার দিন অল্প কিছুক্ষণের জন্য বের হয়েছিলেন। এর মধ্যেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাবরিনা রহমান বলেন, আগুনে মেয়েটির মুখ ও শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, মাটির পুতুল পোড়াতে গিয়ে মেয়েটির জামায় আগুন লাগে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।