[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহী নগর: ১০ কিলোমিটার দূরত্বে সবজির দাম কয়েক গুণ পর্যন্ত বেশি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া বাজারে খড়খড়ি বাইপাস বাজারের চেয়ে সবজির দাম কয়েক গুণ বেশি। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী নগরের ১০ কিলোমিটার দূরে পবা উপজেলার খড়খড়ি বাইপাসে প্রতিদিন ভোর থেকেই সবজি বেচাকেনা চলে। সকাল ১০টার মধ্যে এই বাজারের সবজি ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহী নগরে। দূরত্ব খুব বেশি না হলেও খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে নগরের বাজারগুলোয় সবজির দামে কয়েক গুণ বেশি রাখা হচ্ছে। কোনো কোনো সবজি চার গুণ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে নগরের বাজারগুলোয়।

আজ রোববার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত খড়খড়ি বাইপাস ছাড়াও রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। খড়খড়ি বাইপাস বাজারে কৃষক আমিনুল হক ৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করছিলেন। সেই বেগুন পাইকারিতে ৭ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আমিনুল খুব ভোরে পবার ডাঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে ৬ মণ বেগুন এনেছেন। বেগুনখেত থেকে তুলতে খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। আর বাজারে নিয়ে আসতে একই পরিমাণ টাকা লেগেছে। তিনি বলেন, ভ্যানভাড়া আর খেত থেকে তোলার খরচও উঠবে না আজ। বেগুনের দাম একেবারে পড়ে গেছে।

অথচ ১০ কিলোমিটার দূরত্বে নগরের সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছিল ২০ টাকা কেজি দরে। বাজারের বিক্রেতা শহীদুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি বেশি দরে কিনেছেন। এ কারণে দাম বেশি। আবার তাঁকে বেগুন এনে সাজিয়ে বসে থাকতে হবে সারা দিন। এর খরচও আছে। একই দরে নগরের বিনোদপুর বাজারেও বিক্রি হচ্ছিল বেগুন। অথচ এই বাজার থেকে সবজি কিনে নগরে আনতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। রাস্তাঘাটও পাকা।

রাজশাহীর খড়খড়ি বাইপাস বাজারের কৃষক থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে পটোল কিনে ৩২ টাকায় বিক্রি করছেন একজন। অথচ ১০ কিলোমিটার দূরে নগরের সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া বাজারে একই পটোল বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি দরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

খড়খড়ি বাইপাসে আলু ২৫ টাকা কেজি, ঢ্যাঁড়স ৩৫, শসা ৩২, করলা ৩৫ থেকে ৪০, পটোল ৩২, কলার হালি ১২, লাউ ১০, ফুলকপি ২০, বাঁধাকপি ৭ থেকে ১০ টাকা প্রতিটি, টমেটো ২৫, পালংশাক ৫ টাকা আঁটি, মরিচ ৩২, পেঁয়াজ ৪২, রসুন ১০০, আদা ১৭০, লেবুর হালি ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নগরের সাহেব বাজার ও বিনোদপুর বাজারে আলু ৩৫, ঢ্যাঁড়স ৫০, শসা ৪০ থেকে ৪৫, করলা ৫০ থেকে ৬০, পটোল ৬০, কলার হালি ২০, লাউ ২০, ফুলকপি ৪০, বাঁধাকপি ১৫ টাকা প্রতিটি, টমেটো ৪৫, পালংশাক ১০ টাকা আঁটি, মরিচ ৫০ থেকে ৫৫, পেঁয়াজ ৫০, রসুন ১২০, আদা ১৯০, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রাজশাহী জেলা বাজার তদারকি কর্মকর্তা আফরিন হোসেন বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া দরে বাজার স্বাভাবিক করার জন্য অভিযানও চলছে। কোথাও কোথাও জরিমানাও করছেন। বাজারভেদে পণ্যের দামের ব্যাপক পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। তাঁরা এটি নিয়েও কাজ করছেন। হাতবদলে কিছু সবজির দাম অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে।

দামের এই তফাতের কথা কৃষকেরাও জানেন। হাট পারিলা গ্রামের কৃষক রমজান আলী খড়খড়ি বাইপাসে পটোল নিয়ে এসেছিলেন ১০ মণের মতো। তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করছিলেন ২৮ থেকে ২৯ টাকা কেজি দরে। তাঁর কাছ থেকে পটোল কিনে একটু দূরে আরেকজন ৩২ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। রমজান বললেন, তিনি জানেন এই পটোল শহরে গিয়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। সবজিতে বেশি টাকার মুনাফা করেন মধ্যের লোকজন। কারণ বাজার তদারকি করার কেউ নেই। যে যাঁর মতো করে বিক্রি করছেন।

নগরের সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে শাকসবজি কিনতে এসেছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, শাকসবজি কিনতে তাঁর খরচ হয়েছে সাড়ে ৪০০ টাকার মতো। একটু গ্রামের দিকে গিয়ে কিনলে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাঁচানো যেত। কিন্তু এভাবে প্রতিদিন বাজার করা সম্ভব নয়।

১৬ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজারে স্বস্তি ফেরাতে ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। অধিকাংশ পণ্য সেই দামে পাওয়া যাচ্ছে না। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, একদিকে কৃষক দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে ক্রেতাও ঠকছেন। মধ্যখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিক মুনাফা নিচ্ছে। প্রশাসনের জোরালো তদারকির অভাবে বাজার অস্থিতিশীল।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন