[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জাতীয় চিড়িয়াখানা: জন্মের ৮ মাস পর প্রকাশ্যে ওরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
জন্মের প্রায় আট মাস পর প্রথমবারের মতো দর্শনার্থীদের সামনে আনা হলো বকুল, কসমস ও চন্দন নামের তিনটি বাঘের শাবক। শিউলি-কদম বাঘ দম্পতির এই শাবকগুলোকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হলো। গতকাল মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বকুল, কসমস ও চন্দন—তিন বাঘশাবক। জন্ম চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল। রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় শিউলি–কদম বাঘ দম্পতির এই তিন শাবকের দেখা এত দিন পাননি দর্শনার্থীরা। জন্মের প্রায় আট মাস পর গতকাল শুক্রবার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আনা হয়েছে বাঘশাবক তিনটিকে।

মিরপুর চিড়িয়াখানায় মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ডান দিকে এগিয়ে গেলে লেকের ধারে সি–২১ খাঁচা। গতকাল দুপুরের দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মা শিউলির সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা গেল বকুল, কসমস ও চন্দনকে। এই আট মাসে বাঘশাবক তিনটি বেশ বড় হয়ে গেছে। তিনটি শাবকই পুরুষ। বকুল বাদামি, কসমস হালকা লাল ও চন্দনের গায়ের রং গাঢ় লাল। তিনটি শাবকই মায়ের সঙ্গে খেলা করছে। প্রতিটিকে এখন সপ্তাহে পাঁচ দিন তিন কেজি করে গরুর মাংস এবং সপ্তাহে এক দিন এক কেজি করে জীবিত ব্রয়লার মুরগি দেওয়া হয়।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দর্শনার্থীদের দেখার জন্য এখন থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার জন্য বাঘের এই তিন শাবককে খাঁচার ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টায় বের করা হবে। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে আবার খাঁচার ভেতর থাকা ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে।

গতকাল প্রথমবারের মতো যখন দর্শনার্থীদের দেখার জন্য খাঁচার ফাঁকা জায়গায় আনা হয়, তখন বাঘশাবক তিনটি কিছুটা ভয় পাচ্ছিল বলে জানালেন একজন কর্মকর্তা। বললেন, ‘ওরা বের হতে খুব ইতস্তত করছিল। একটা একটু বেশি ভিতু, লুকিয়ে ছিল। যেহেতু দর্শকের সামনে আনা হবে, তাই খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।’

পূর্ণ সময় বাঘশাবকগুলোকে দর্শনার্থীদের সামনে রাখতে আরও সাত থেকে আট মাস সময় লাগবে। আস্তে আস্তে প্রকাশ্যে রাখার সময় বাড়ানো হবে বলে জানালেন কর্মকর্তারা।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এখন শীতকাল চলে এসেছে। জন্মের পর থেকে শাবক তিনটি ঘরের ভেতরে ছিল। প্রাণীর জন্য রোদ খুব প্রয়োজন। বাইরে দিলে এখন ওরা রোদ পাবে। বড় জায়গা পেয়েছে, নিজেরা নিজেরা হাঁটতে ও দৌড়াতে পারবে। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।
ভিন্ন ভিন্ন মত

এই তিন বাঘশাবকের খবর প্রথম জানা যায় জন্মের চার মাস পর। তখন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বলেছিল, জন্মের পর প্রথম আট মাসে বাঘশাবকের মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই বিপৎকাল অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাঘশাবকের জন্মের খবর জানাতে চায়নি তারা।

আট মাস শেষ হওয়ার মাথায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাদের প্রকাশ্যে নিয়ে এল।

রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সেখানে চারটি ঘর রয়েছে। সবগুলো ঘরেই শাবকগুলো যেতে পারে। ফলে ঘরে রাখা হলেও সেখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে। শাবকগুলো ঘরে কিছুটা রোদ পেত, তবে পর্যাপ্ত পেত না। ঘরের ভেতর সব জায়গা টাইলস করা নয়, একটা অংশে বালু আছে। ফলে বাচ্চাগুলোর সুস্থ থাকায় সমস্যা হয়নি।

তবে জন্মের পর এত দিন প্রকাশ্যে না আনা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কেউ বলছেন, এতে শাবকগুলোর জন্য ভালো হয়েছে। দর্শনার্থীদের বিরক্তি ছাড়াই বড় হতে পেরেছে। আবার কেউ মনে করেন, এ ধরনের সংস্কৃতি চালু হলে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মধ্যে অস্বচ্ছতা দেখা দিতে পারে।

আট মাস পর দর্শনার্থীদের সামনে আনার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, খাঁচায় তাপমাত্রা, খাবারসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রাখা গেলে সমস্যা নেই। তা ছাড়া নানা কারণে বাচ্চাদের একটু লুকিয়ে রাখতে চায় মায়েরা। এই সময়ে তারা বেশ বড় হয়ে গেছে। এতে শাবকগুলোর ভীতিও কমে গেল।

তবে সুস্থ শাবক হলে এত দিন খাঁচায় রাখার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শাবকগুলোকে স্বাভাবিক পরিবেশে ভালোভাবে রাখা হয়েছে কি না। স্বাভাবিক নিয়মে শাবকগুলো লাফঝাঁপ করে, দৌড়াদৌড়ি করে, শিকার করা শেখে—সেগুলো থেকে শাবকগুলোকে বঞ্চিত করে রাখা হলে সমস্যা।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন