[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ডাচদের কাছেও হারল বাংলাদেশ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

উইকেট পাওয়ার পর উদযাপনের মধ্যমণি পল ফন মিকেরেন |  ছবি: নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটের এক্স পাতা

ক্রীড়া প্রতিবেদক:  ডারবানের পাশেই তাহলে এখন কলকাতাকে রাখতে হয়। কিংসমিডের পাশে ইডেন গার্ডেনকে। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন, কোনটাকে পিছিয়ে—এ নিয়ে অবশ্য কথা হতেই পারে। কলকাতায় কী হয়েছে, তা বলার প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না। ডারবানের কিংসমিডে কী হয়েছিল, মনে আছে তো?

বিশ বছরেরও বেশি আগের কথা। তার মানে কারও সেই দিনটির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকতে হলে বয়স কমপক্ষে ২৪-২৫ হতে হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। এর চেয়ে কম হলেই বা কী! ২০০৩ বিশ্বকাপে কানাডার কাছে সেই পরাজয় এত আলোচিত যে, কোনো না কোনোভাবে তা সবারই জানা হয়ে যাওয়ার কথা। সেই ম্যাচের পরদিন ছিল ঈদ। বাংলাদেশের মানুষের ঈদকে নিরানন্দ করে দিয়েছিল অপ্রত্যাশিত ওই পরাজয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেদনাময় দিন হিসেবে এত দিন ডারবানের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এখন কেউ কলকাতাকে রাখতেই পারেন পাশে।

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথম বিশ্বকাপ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ কোনো আশা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায়নি। এবার তো ছিল সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। টানা সপ্তম বিশ্বকাপ খেলতে আসা কোনো দলের তো এই স্বপ্ন দেখাই উচিত। যা নিয়ে আর কথা না বলাই মনে হয় ভালো। আজ রাতে বাংলাদেশের পরাজয় যখন শুধুই সময়ের ব্যাপার, ইডেনের প্রেসবক্সে বিদেশি সাংবাদিকদের অনেকে হিসাব-নিকাশ করছিলেন। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার আর কোনো সম্ভাবনা নেই, এটা কি নিশ্চিতভাবে এখনই বলে দেওয়া যায়? গাণিতিকভাবে কি এখনো তা সম্ভব নয়!

শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এদের কেউ কি বাংলাদেশের আগের চারটি ম্যাচ দেখেননি! দেখে থাকলে তো ওই হিসাব-নিকাশ করার কথা নয়। পরের তিনটি ম্যাচ জিতলেও তো বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্য। জেতার সম্ভাবনাও কি এখন তা-ই হচ্ছে না!

ডারবানের ওই পরাজয়ের ময়নাতদন্ত বলে, সেটি ছিল অতি আত্মবিশ্বাসে আক্রান্ত হয়ে কানাডাকে বেশি হালকাভাবে নেওয়ার শাস্তি। আর এবার? গত কয়েক দিনের আবহ দেখে মনে হচ্ছে, কলকাতায় নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাজয়ে ‘মূল বোলার’—চাপ। মাত্র ৪ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের দারুণ শুরুও যেটি থেকে মুক্তি দিতে ব্যর্থ। ক্যাচের পর ক্যাচ ফেলা হয়তো সে কারণেই। শূন্য রানে দুই-দুইবার নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের ক্যাচ ফেলে তাঁকে হাফ সেঞ্চুরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। নির্দিষ্ট করে বললে গালিতে লিটন আর উইকেটের পেছনে মুশফিক। মোস্তাফিজের এক ওভারের তিন বলের মধ্যে এই দুটি ক্যাচের কোনো একটি নিতে পারলেই নেদারল্যান্ডস হয়ে যেত ৫ উইকেটে ৬৩। এর মূল্য দিয়ে যেখানে তা পড়েছে আরও ৪৪ রান যোগ হওয়ার পর।

বাংলাদেশ ইনিংসের সময় টেলিভিশনে লিটনের এডওয়ার্ডসের ক্যাচ ফেলা আর ফন বিকের নাজমুলের ক্যাচ নেওয়ার একটা তুলনা দেখাচ্ছিল। ফিল্ডার দুজন একই পজিশনে, তবে ফন বিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য সময় পেয়েছেন অনেক কম। তারপরও তিনি ক্যাচটা ঠিকই নিয়েছেন। লিটন পারেননি। এই ম্যাচের দুই দলের পার্থক্যটা বোঝাতেই ওই তুলনা এবং তা একেবারেই যথার্থ।

চাপকে কারণ বলছি বটে, কিন্তু এই পর্যায়ের ক্রিকেটে চাপ সামলাতে পারাটাও কি খেলোয়াড়ি দক্ষতার মতোই গুরুত্বপূর্ণ নয়? আর নেদারল্যান্ডস ম্যাচে না বাড়তি চাপ ছিল, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে বিবর্ণ পারফরম্যান্স, সেটি তো আর এই ম্যাচে এসে নয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটা বাদ দিলে প্রতিটি ম্যাচেই তো বাংলাদেশ ধুঁকেছে মাঠে।

ক্যাচ না ফেললে নেদারল্যান্ডসকে হয়তো ১৭০-১৮০ রানেই আটকে ফেলা যেত। মেহেদী হাসানের শেষ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ফেলা হয়তো বিরতির সময় নেদারল্যান্ডসকে একটু চাঙাই করে থাকবে। কিন্তু তারপরও তো মাত্রই ২২৯। এই সময়ে এটা কোনো রান নাকি! ২৩০ তাড়া করতে নেমে কেন বাংলাদেশ ১৪২ রানেই মুখ থুবড়ে পড়বে! সেই ১৪২-ও হবে বলে ভাবা যায়নি। ৭০ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তো এক শ পেরোনো নিয়েই সংশয়।

এক মাহমুদউল্লাহ ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানেরা যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন জাগে। খেলোয়াড়ি দক্ষতা, নিবেদন, ভালো কিছু করার প্রতিজ্ঞা, জিগীষা...চাইলে তালিকাটা আরও অনেক বড় করা যায়। অধিনায়ককে সামনে থেকে পথ দেখাতে হয়। সেটি সাকিব দেখিয়েছেন উল্টো অর্থে। মাঝখানে দুদিনের জন্য ঢাকা ঘুরে এসেছেন। বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সেই সফরের পরও সাকিব আগের মতোই বিবর্ণ। শরীরের এত কাছের বল কাট করতে যাওয়ার সাহসটাই যা একটু অবাক করার মতো।

দর্শক ধারণক্ষমতার দিক থেকে এক সময় এমসিজির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ইডেন গার্ডেনের। ইডেনই হয়তো এগিয়ে ছিল। গ্যালারিতে কংক্রিটের বেঞ্চে বসার সেই যুগে ইডেনের দর্শক তখন লাখও ছাড়িয়েছে অনেকবার। চেয়ার-টেয়ার বসিয়ে আধুনিক চেহারা নেওয়ার মূল্য দিতে হয়েছে আসনসংখ্যা কমিয়ে। ধারণক্ষমতা নেমে এসেছে ৬৮ হাজারে। এর এক চতুর্থাংশও ভরেনি এদিন। আইসিসির প্রতিনিধি ঘোষণা করলেন, সন্ধ্যা ৭টার সময় গ্যালারিতে দর্শক ছিলেন ১৫,২০২ জন। এর সংখ্যাগরিষ্ঠই বাংলাদেশ থেকে আসা সমর্থক। তাঁদের গলায় এমন জোর যে, গ্যালারি এমন খালি তা বোঝার উপায় নেই।

বাংলাদেশের ইনিংস শুরুর কিছুক্ষণ পরই অবশ্য সেই গ্যালারি ভুল বোঝাতে শুরু করল। একেকটা উইকেট পড়ছে, আর হর্ষধ্বনি উঠছে গ্যালারি থেকে। হতাশা-ক্ষোভ-রাগ সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সমর্থকরাই দল বদলে নেদারল্যান্ডসকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন। সাকিব আউট হয়ে ফেরার সময় দুয়োধ্বনিও শুনতে হলো তাঁকে।

এখানে দেখছি ডারবানকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে দিচ্ছে কলকাতা!

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন