[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

‘পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের দাবি আদায়ের মূল হাতিয়ার জনগণকে জিম্মি করা’

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বাস-অটোরিকশা শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো নওগাঁ থেকে আন্তজেলা ও জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ আছে। সকালে নওগাঁ বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও বাসের মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দ্বিতীয় দিনের মতো উভয় পক্ষই যান চলাচল বন্ধ রেখেছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আন্তজেলা ও জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ কারণে মঙ্গলবারের মতো আজ বুধবারও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

আজ সকালে নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে টার্মিনাল ও সিএনজি স্টেশন থেকে কোনো বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছেড়ে যাচ্ছে না। টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে আন্তজেলা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক বাস। জেলা শহর থেকে ঢাকা-রাজশাহীসহ দূরের গন্তব্যে ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাওয়ার জন্য যাত্রীরা টার্মিনালে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে এসে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা না পেয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের একমাত্র ভরসা বিআরটিসির বাস ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। তবে ইজিবাইকে যেতে অন্য সময়ের চেয়ে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

টার্মিনালে এসে বাস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেক যাত্রী। বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালে আসা সুমন আলী নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমাকে জরুরি ভিত্তিতে রাজশাহী যেতে হবে। অনেকক্ষণ ধরে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এমনকি কোনো সিএনজি অটোরিকশাও ছাড়ছে না। এখন রাজশাহী যাওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।’

বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকার মাতাজি মোড়ে শোভা পরিবহনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরিদুল করিম নামের সিরাজগঞ্জগামী এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কেটেছিলাম। আজ বাস ছাড়ার আগে এসে দেখি কাউন্টার বন্ধ। আমার এক নিকটাত্মীয় সিরাজগঞ্জ খাজা ইউনুস ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে দেখতে সেখানে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম।’

বাস ও অটোরিকশা বন্ধ থাকায় যাত্রীদের একমাত্র ভরসা বিআরটিসি পরিবহনের বাস ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। মঙ্গলবার সকালে নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বালু বাস টার্মিনালের মতো ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। স্টেশনে বাসের জন্য অনেক যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে এসআর পরিবহন কাউন্টারের সামনে কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামে ঢাকাগামী যাত্রীর সঙ্গে। বাস না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শরিফুল বলেন, ‘পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের দাবির কোনো শেষ নেই। সকালে এক দাবি, তো বিকেলে আরেক দাবি। আর দাবি আদায় করতে পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের মূল হাতিয়ার হলো জনগণকে জিম্মি করা।’

বগুড়াগামী যাত্রী আকবর হোসেন বলেন, ‘যান চলাচল বন্ধ করতে এই দেশে কোনো ঘোষণা লাগে না। যখন যার ইচ্ছা হয় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করাই পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের লক্ষ্য।’

বাস ও অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাস ও অটোরিকশার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অটোরিকশার শ্রমিক ও মালিকেরা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই ঘটনার জেরে গতকাল সকাল ছয়টা থেকে বাস ধর্মঘটের ডাক দেন বাসশ্রমিকেরা।

জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের এক সদস্যকে অটোরিকশা সমিতির লোকজন মারধর করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আজ দুপুরে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে শ্রমিকসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।’

জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিক হোসেন বলেন, ‘বাচ্চু সরদার নামের আমাদের একজন অটোরিকশাচালককে সোমবার বেলা তিনটার দিকে মান্দার ফেরিঘাটে বাস মালিক সমিতির লাঠিয়াল বাহিনীর লোকজন মারধর করেছেন। তাঁরা তিনটি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছেন। বাসের লোকজন প্রতিদিনই আমাদের রাস্তায় অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিচ্ছেন, যা অন্যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা আশানুরূপ সহযোগিতা পাচ্ছি না। এ কারণে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।’

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, ‘নওগাঁয় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসন করে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন