[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

লালপুরে একসঙ্গে এসএসসি পাস করলেন বাবা-মেয়ে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

আবদুল হান্নান ও তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুন ছবি: সংগৃহীত

লালপুর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাসের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মেয়ে জিপিএ ৩.৭২ আর তার বাবা জিপিএ ৪.০৭ পেয়ে কৃতকার্য হন।

উপজেলার গোপালপুর রেলগেটের চা বিক্রেতা মো. আব্দুল হান্নান (৪২) এবং তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুন (১৫) এ বছর (২০২৩) এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। আব্দুল হান্নান বলেন, তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে লালপুর শ্রী সুন্দরী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর তিনি রুইগাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি (ভকেশনাল) শাখায় লালপুর থানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন।

গত ২৮ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে হালিমা খাতুন জিপিএ ৩.৭২ পেয়ে কৃতকার্য হলেও আব্দুল হান্নান পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অকৃতকার্য হন। তাতে আব্দুল হান্নানের মন খারাপ হলেও নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। গত সোমবার প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪.০৭ পেয়ে কৃতকার্য হন তিনি।

উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, তিনি ২৫ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন। পড়াশোনা ছেড়ে তখন চায়ের দোকান দেন। একপর্যায়ে সংসার পাতেন। পরিবারে এখন স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে হালিমা খাতুন এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসএসসি পাস না করার আক্ষেপ থেকে দুই যুগ পর এবার তিনিও পরীক্ষা দেন।

আব্দুল হান্নান আরও বলেন, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন তিনি। আর্থিক টানাপড়েনে পড়াশোনা ছেড়ে পেটের তাগিদে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান খুলে বসেন। বিয়ে করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার পেতেছেন। কিন্তু এসএসসি পাস করার ইচ্ছা থেকে রুইগাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ে ভকেশনাল শাখায় ভর্তি হন। চা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেন। ঠিক পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পরিবারের সবাইকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা জানান। দীর্ঘদিন পর আশা পূরণ হওয়ায় তিনি যারপরনাই খুশি।

বাবার সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে পাস করায় আনন্দিত হালিমা খাতুনও। সে বলে, ‘যখন শুনলাম বাবা আমার সঙ্গেই পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন ভীষণ ভালো লেগেছে। এখন লোকজনকে বলতে পারব, আমার বাবাও এসএসসি পাস। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

প্রতিবেশী আতিকুর রহমান বলেন, মেয়ের সঙ্গে বাবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গ্রামের মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। তাঁদের এই সফলতায় গ্রামের মানুষ অনেক খুশি। তারা ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, ‘বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এসএসসি পাসের বিষয়টি প্রশংসার দাবিদার। এটা আনন্দের খবর। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলের কারণেই মেয়েকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি বাবা নিজেও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছেন। তাদের দুজনের জন্যই শুভ কামনা।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন