[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সারিয়াকান্দি যমুনার স্পারের সংযোগ বাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে নির্ঘুম রাত

প্রকাশঃ
অ+ অ-

যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় স্পারের পশ্চিম মুখে সংযোগ বাঁধে বুধবার রাতে ভাঙন দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে হাসনাপাড়া স্পার-২-এর সংযোগ বাঁধে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: ‘রাত দশটা হবি। খায়্যা কেবলই ঘুমাচি। ওমনি হইচই, শোরগোল। সগলি কচ্চে বানের পানিত বাঁধ ভাঙিচে, বাড়িঘর সরানো লাগবি। ধরফর করে ঘুমত থ্যাকে উটনু, তড়িঘড়ি করে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে লিচি। বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচি। এই বাঁধ ভাঙে গেলি সব ম্যাচাকার হয়্যা যাবি।’

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে প্রায় দুই যুগ আগে নির্মিত হাসনাপাড়া স্পার-২-এর সংযোগ বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় এভাবেই রাতভর আতঙ্কের কথা বলছিলেন বাঁধে আশ্রয় নেওয়া হাসনা বেগম।

বুধবার রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত স্পারের মুখে ২০ থেকে ৩০ মিটার অংশ ধসে গেছে। বাঁধ ভেঙে গেলে পাঁচ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় হারানোর শঙ্কায় পড়েছে। বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ও সিনথেটিক ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদীর ভাঙন রোধে ২০০১-০২ অর্থবছরে ১০ কোটি ১৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা ব্যয়ে হাসনাপাড়া, চন্দনবাইশা, শহরাবাড়ী ও বানিয়াজান স্পার নির্মাণ শেষ হয়। হাসনাপাড়া স্পারটির দৈর্ঘ্য ৫৮৫ মিটার। স্পারটির মূল কাঠামোর দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং এর বালুর সংযোগ বাঁধের দৈর্ঘ্য ৪৩৫ মিটার। যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় স্পারের পশ্চিম মুখে সংযোগ বাঁধে বুধবার রাতে ভাঙন দেখা দেয়।

ভাঙন ঠেকাতে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ও সিনথেটিক ব্যাগ। সারিয়াকান্দির হাসনাপাড়া স্পার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বৃহস্পতিবার সকালে হাসনাপাড়া স্পার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্পার-সংলগ্ন বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে, উৎকণ্ঠায় লাখো মানুষ। ভাঙন রোধে পাউবো বালুভর্তি জিও ও সিনথেটিক ব্যাগ ফেলছে। স্পারের মুখেই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পলাশ প্রামাণিক (৬০) বলেন, ‘রাত থ্যাকে বাঁধে আশ্রয় লেওয়া লাখো মানুষ আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।’ মাহবুব মণ্ডল (৬৫) বলেন, ‘এ বাঁধ ভাঙলে নিজবলাইল থ্যাকে সারিয়াকান্দি পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার বাঁধ বিলীন হয়ে যাবে। লাখো মানুষ বাড়িঘর হারাবে।’ রুবেল মিয়া বলেন, ‘বান আসলেই বাঁধ রক্ষার তোড়জোড় শুরু হয়। ১০০ জিও ব্যাগ ফেলে ১ হাজার ব্যাগের বিল তোলে ঠিকাদার।’

প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার বলেন, সারিয়াকান্দি হাসনাপাড়া স্পার-১-এর স্যাংকের এবং মূল কাঠামোর সংযোগ স্থানে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙন শুরু হয়। এতে নিমেষেই প্রায় ২০ মিটার এলাকা ধসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানান। রাতেই বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত থেকেই ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ও সিনথেটিক ব্যাগ ফেলা শুরু হয়। আজ সকাল পর্যন্ত সেখানে ৪০০-এর বেশি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর কার্যসহকারী রবিন আহমেদ।

সারিয়াকান্দির ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক, ‘হাসনাপাড়া স্পারে ভাঙন রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জিও টেক্সট ব্যাগ ফেলা নিয়ে যাতে অনিয়ম-দুর্নীতি না হয়, সে জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে তদারক করা হচ্ছে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন