[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ভাঙ্গুড়ায় জুয়া খেলার প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে তালাক

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ছেলে-মেয়েকে নিয়ে তিন দিন ধরে অনশনে লিজা বেগম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি ভাঙ্গুড়া: ১৬ বছরের সংসার লিজা ও শাহীন দম্পতির। তাদের ঘরে ১০ ও ১২ বছরের দুইটি সন্তান রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় কখনো সুখের মুখ দেখেননি লিজা। স্বামীর জুয়া খেলার টাকা জোগাড় করতে প্রতিনিয়ত প্রবাসী ভাইয়ের কাছে হাত পাততে হয়েছে তাকে।

টাকা না পেলেই শাহীন লিজার ওপর চালাতেন শারীরিক নির্যাতন। বাধ্য হয়ে বোনের সুখের জন্য প্রবাসী ভাই প্রায়ই টাকা দিতেন শাহীনকে। এরপরও তাদের সংসার টেকেনি।

জুয়া খেলা ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় শাহীনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন লিজা।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহীন তিন দিন আগে লিজাকে তালাক দেন। তবে লিজার প্রাপ্য কাবিনের ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেননি শাহীন।

এদিকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার চার-পাঁচ দিন পার হলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় লিজা দুই সন্তানকে নিয়ে গত তিন দিন ধরে শাহীনের বাড়িতে অনশনে বসেছেন। শাহীন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে।

জানা যায়, ১৬ বছর আগে পারিবারিকভাবে শাহীনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পাটুলিপাড়া গ্রামের জলিল সরদারের মেয়ে লিজার বিয়ে হয়। শাহিন যুবক বয়স থেকেই জুয়া খেলায় আসক্ত। বিয়ের সময় লিজার পরিবার থেকে নেওয়া যৌতুকের টাকা সে সময় তিনি জুয়া খেলে শেষ করেন বলে অভিযোগ লিজার পরিবারের। এরপর অনেকবার শাহীন স্ত্রীকে চাপ দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে জুয়া খেলেন। এভাবে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে শাহীন জুয়া খেলে টাকা খুইয়েছেন।
ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তিনি একাধিকবার আত্মগোপনেও থাকেন। পরে লিজার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে তিনি এনজিওর ঋণ পরিশোধ করেন।

গত কয়েক বছর লিজার পরিবার শাহীনকে জুয়া খেলার নেশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। উপরন্তু জুয়া খেলার টাকা না পেয়ে প্রায়ই লিজাকে ব্যাপক মারধর করেন বলে শাহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিবারের। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকবার সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হকসহ, জেলা পরিষদ সদস্য আসলাম আলী, ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ বিষয়ে সালিস বৈঠক করে সমাধান করতে ব্যর্থ হন। এর পরদিন শাহীন লিজাকে ডিভোর্স দেন।

লিজা বেগম বলেন, ‘সালিসের দিন রাতেও ব্যাপক মারধর করে শাহীন। এক পর্যায়ে গলায় গামছা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় পা ধরে প্রাণভিক্ষা চাইলে ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। এর পর থেকে দুই সন্তান নিয়ে অসহায় দিনযাপন করছি।’

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যৌতুকের জন্য প্রায়ই শাহীন মারধর করত গৃহবধূ লিজাকে। এমনকি সালিস বসার আগেও ওই গৃহবধূকে মারধর করে তার স্বামী। এরপর ডিভোর্স দেওয়ায় ওই নারী এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক বলেন, ‘শাহীন জুয়া খেলার কারণেই পরিবারে অশান্তি। তবে সালিস করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু শাহীনের প্রভাবশালী এক আত্মীয়ের জন্য সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।’

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই গৃহবধূ অভিযোগ দিলেও থানা পুলিশের কিছু করার নেই। তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

অনশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা অনশনের কোনো বিষয় নয়। তার ভাইয়েরা বিষয়টি দেখতে পারেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘বিষয়টির খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন