[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

এএসপি পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে কৃষক বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন মোনোয়ার

প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজশাহীর বাগমারার কৃষকের ছেলে মোনোয়ার হোসেন। তিনি ৪১তম বিসিএসে পুলিশের এএসপি হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি বাগমারা: শফির উদ্দিন একজন গরিব কৃষক। দিনমজুরি ও মাছ ধরে সংসার চলে তাঁর। সামান্য আয়ে সংসারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি ছেলে মোনোয়ার হোসেনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। স্বপ্ন দেখতেন ছেলে পুলিশ কর্মকর্তা হবে। যদিও মোনোয়ারের প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন।

গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চাউর ছিল, ‘মোনোয়ার ভালো কিছু করবে।’ মোনোয়ারও চাইতেন, ভালো কিছু করে গ্রামবাসীর সামনে বাবা-মায়ের মুখ রক্ষা করবেন। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে কৃষক বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন মোনোয়ার হোসেন। তাঁর সাফল্যে গ্রামবাসীও গর্বিত।

মোনোয়ার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ডাক্তা গ্রামের কৃষক শফির উদ্দিনের ছেলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় পরিচিতরা তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মোনোয়ারের ভাষ্য, বাবা তাঁকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। যখন মাছ ধরতে পারতেন না, এলাকার বাইরে গিয়ে দিনমজুরি করতেন। যেভাবে হোক তাঁর খরচের টাকা পাঠাতেন।

মোনোয়ার গ্রামের স্কুল-কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষ করার পরই বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। প্রথম ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ক্যাডার হতে না পারলেও নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ইচ্ছা ছিল ক্যাডার হওয়ার। ঢাকায় থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে তিনি নন-ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডে (জিটিসিএল) সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন। বেতনের টাকায় নিজে চলতেন ও বাড়িতে বাবা-মায়ের জন্য পাঠাতেন।

মোনোয়ার বলেন, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বড় কোনো বিষয় নয়। নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রস্তুত করাটাই বড়। তিনি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও উচ্চমাধ্যমিকে পাননি। এরপর রাজশাহী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরপরই বিসিএসের প্রস্তুতি নেন তিনি।

তবে মোনোয়ারের বিসিএস প্রস্তুতি মোটেও সহজ ছিল না। জিটিসিএলে চাকরি করার পাশাপাশি বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী মেফতাহুল জান্নাতও তাঁকে সহায়তা করতেন। কর্মস্থল থেকে যখন বাসায় ফিরতেন, তখন খাওয়াদাওয়ার পর পড়ালেখার পরিবেশ করে দিতেন তিনি।

মোনোয়ার হোসেন বলেন, বিয়ের কারণে সমস্যা হয়নি; বরং গতি বেড়েছে। স্ত্রী সব সময় তাঁকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করেছেন। পরীক্ষার দিনে তিনি (স্ত্রী) প্রবেশপত্র, কলমসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে দিতেন। মানসিকভাবেও সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁর এত দূর পর্যন্ত এগিয়ে আসার জন্য বাবা-মায়ের অবদান বেশি।

মোনোয়ার ৪৩ ও ৪৪তম দুটি বিসিএস পরীক্ষায় টিকে আছেন। সেগুলোর চূড়ান্ত ফলাফল হয়নি। তাঁর ৪১তম বিসিএসে প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন। দ্বিতীয় পছন্দের ক্যাডার ছিল পুলিশ। পুলিশ ক্যাডার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে মোনোয়ার খুশি। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবা-মা ও গ্রামের লোকজনের মুখে একটা কথা প্রচলিত ছিল, ‘মোনোয়ার ভালো কিছু করবে।’ তিনিও চাইতেন, ভালো কিছু করে গ্রামবাসীর সামনে বাবা-মায়ের মুখ রক্ষা করবেন। এ জন্য সব সময় নিজেকে প্রস্তুত করেছেন তিনি।

ডাক্তা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, মোনোয়ারের বাবা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খেতেন এমন অবস্থা। ছেলেকে মানুষ করার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। মোনোয়ার ভালো কিছু করবে সেটা তাঁরা আশা করতেন। তাঁর এ সাফল্যে গ্রামবাসী গর্বিত।

একই গ্রামের বাসিন্দা ও ভবানীগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হাতেম আলী বলেন, মোনোয়ার তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। তাঁকে নিয়ে শিক্ষকেরা গর্বিত বলে তিনি জানান।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন