[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক: ১০ বছর ধরে নতুন কোনো প্রাণী আসেনি, কমছে জৌলুশ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশের একটি ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে এক জোড়া প্রাপ্তবয়স্ক লেপার্ড | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গাজীপুর: দেশের সবচেয়ে বড় জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রায় ১০ বছর ধরে নতুন কোনো প্রাণী আমদানি করা হচ্ছে না। এর মধে্য মারা গেছে অনেক প্রাণী। কিছু প্রাণী অসুস্থ। এতে আকর্ষণ হারাচ্ছে পার্কটি।

৩৮১ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা পার্কটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় কয়েক ধাপে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন প্রাণী আমদানি করা হয়। এরপর বিভিন্নভাবে অনেক প্রাণী কমলেও শূন্যতা পূরণের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তার  বলেন, রেভিনিউ বাজেটে প্রাণী আমদানির জন্য বরাদ্দ নেই। তবে একটি প্রকল্প পাইপ লাইনে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাণী আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রাণীগুলো ভালো নেই
পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় কয়েক ধাপে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১০টি জিরাফ আনা হয়। পার্কে জিরাফের বাচ্চার জন্মও হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময় কিছু জিরাফ মারা যায়। শেষ পর্যন্ত টিকে আছে তিনটি স্ত্রী জিরাফ। ফলে জিরাফের পালে নতুন করে বাচ্চা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পুরুষশূন্য থাকলেও নতুন করে জিরাফ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত ১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বশেষ পুরুষ জিরাফটি মারা যায়।

পার্কে ছয় সদস্যের সিংহের পালের চারটিই অসুস্থ। অসুস্থগুলোর মধ্যে তিনটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ। অসুস্থ সিংহগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। দুটি সিংহ সুস্থ থাকলেও পর্যটকেরা সেগুলোকে বেশির ভাগ সময়ই দেখতে পান না। সর্বশেষ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সিংহ মারা যায়।

পার্কে শুরুর দিকেই আনা হয়েছিল এক জোড়া পেলিক্যান। ২০১৭ সালে একটি পেলিক্যান অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এরপর থেকে অপর পেলিক্যানটি একাকী। নতুন করে আর পেলিক্যান আনার উদ্যোগ দেয়নি পার্ক–সংশ্লিষ্টরা।

সাফারি পার্কটিতে ছিল চারটি ক্যাঙ্গারু। ২০১৪ সালে তিনটি ক্যাঙ্গারু আমদানি করা হয়। এগুলোর মধ্যে একটি স্ত্রী বাচ্চা প্রসব করে। এতে ক্যাঙ্গারুর পাল হয় চার সদস্যের। কিন্তু ২০১৮ সাল পর্যন্ত কয়েক ধাপে রোগে ভুগে মারা যায় সব কটি। এরপর সাফারি পার্কে আর আনা হয়নি প্রাণীটিকে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে ৩৮১ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা পার্কটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নারায়ণগঞ্জ থেকে পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করে এক জোড়া লেপার্ড এই সাফারি পার্কে উন্মুক্ত করা হয়েছিল। সেই থেকে ছয় বছর ধরে খাঁচাতেই বন্দি আছে লেপার্ড দুটি। পর্যটন সম্ভাবনা থাকলেও আকর্ষণীয় এই প্রাণীটিকে দর্শনার্থীদের সামনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ছাড়া আর কোথাও এই প্রাণী নেই।

বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যু ও অসুস্থতা নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি নন। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম শুধু অসুস্থ সিংহগুলো নিয়ে বলেন, সিংহগুলো বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছে। এগুলোর চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থায় সিংহ, জিরাফ, অরিক্সসহ কিছু আকর্ষণীয় প্রাণী আনা দরকার। পর্যটকদের জন্য অন্তত ১২ থেকে ১৫টি মিনিবাস দরকার। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে।

জৌলুশ হারিয়েছে অবকাঠামোও
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাণী দেখার জন্য সাফারি পার্কের আটটি পর্যটক মিনিবাসের মধ্যে ছয়টি সচল। সচল বাসগুলোর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নষ্ট। প্রাণী দেখতে আফ্রিকান কোর সাফারির ভেতরে রাস্তা ভাঙাচোরা। সাফারি পার্কে পর্যটকদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পাঁচ বছর ধরেই নষ্ট। পার্কের ভেতরের বিশালাকার লেকে প্যাডেল বোটগুলো জরাজীর্ণ ও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সাফারি পার্কের উত্তর-পশ্চিম অংশের বিশাল এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত শিশু পার্কের অবস্থা জরাজীর্ণ। সেখানে ১৫টি রাইডের মধ্যে প্রায় সব কটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। 

সাফারি পার্ক ঘুরে হতাশা প্রকাশ করছেন দর্শনার্থীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সাফারি পার্ক–সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশালাকায় লেক ভর্তি ছিল বিচিত্র প্রজাতির হাঁস ও পাখি দিয়ে। লেকে প্যাডেল বোট ছিল, ছিল একটি দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু। এগুলো বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ১০ বছর ধরে বয়সের কারণে ও রোগাক্রান্ত হয়ে প্রাণী মারা গেলেও পার্ক–সংশ্লিষ্টরা নতুন করে আমদানির উদ্যোগ নেয়নি। এতে সাফারি পার্ক বিমুখ হয়ে পড়েছেন পর্যটকেরা। ১৫০ টাকা খরচ করে পার্কে প্রবেশের পর হতাশা নিয়ে ফিরে যান তাঁরা।

বুধবার পার্কে কথা হয়, কয়েকজন দর্শনার্থীর। তাঁদের মধ্যে পলাশ সাহা নামে একজন বলেন, টাকা খরচ করলেও বাঘ-সিংহ দেখতে পারেননি তাঁরা। দর্শনার্থী রিয়া ইসলাম বলেন, পার্কজুড়ে প্রাণীর সংখ্যা খুবই কম। শুধু কিছু পাখি, ময়ূর, হরিণ আর জেব্রা দেখতে পেয়েছেন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন