[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

স্বাদে-মানে অনন্য নওগাঁর প্যারা সন্দেশ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নওগাঁর সুস্বাদু প্যারা সন্দে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নওগাঁ: সন্দেশ সাধারণত গোলাকৃতির ও চ্যাপটা হয়ে থাকে। তবে নওগাঁয় বিশেষ ধরনের সন্দেশ পাওয়া যায়, যেটি লম্বাকৃতির। দেখতে কিছুটা রোলের মতো। এটি ‘প্যারা সন্দেশ’ নামে পরিচিত। নওগাঁয় গেছেন আর এই সন্দেশের স্বাদ নেননি, এমন লোক খুব কম আছে। প্যারা সন্দেশ এই অঞ্চলের গর্ব। স্বাদে-মানে অনন্য এই প্যারা সন্দেশ নওগাঁর মানুষের কাছে প্রিয়। শুধু জেলায় নয়, জেলার বাইরেও সুনাম রয়েছে এই সন্দেশের।

নওগাঁর বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের মালিক ও কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের কালীতলা এলাকায় বুড়াকালীমাতা মন্দিরের পাশে বহু বছর আগে একটি মিষ্টির দোকান ছিল। সেই দোকানে ভোগের (দেবতার জন্য উৎসর্গ করা খাবার) মিষ্টি বিক্রি করা হতো। সেই দোকানের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন মহেন্দ্রী দাস নামের এক ব্যক্তি। ভারতের বিহার এলাকায় কোনো এক নবাবের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। নবাবের মৃত্যুর পর তিনি নওগাঁ শহরের কালীতলা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। মিষ্টি তৈরি করে নওগাঁর বিভিন্ন মন্দিরে বিক্রি করতেন। তিনিই প্রথম প্যারা সন্দেশের প্রচলন করেন। মহেন্দ্রীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস কালীতলা মন্দিরের পাশে একটি মিষ্টির দোকান খুলে বসেন। তখন সেই দোকানের মিষ্টি তৈরির কারিগর বিমল মোহন্তের হাতের স্পর্শে প্যারা সন্দেশের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

সেই প্যারা সন্দেশ ছাড়া অতিথি আপ্যায়ন কিংবা সুখবর উদ্‌যাপনের কথা ভাবতেই পারেন না এখানকার মানুষ। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও নিয়ে যান এই মিষ্টি।

স্থানীয় কয়েকজন মিষ্টির কারিগর বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দাস প্রায় ৩০ বছর ব্যবসা করার পর দোকানটি সুরেশ চন্দ্র দাস নামের একজনের কাছে বিক্রি করে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু তত দিনে ধীরেন্দ্রনাথের দোকানের মিষ্টির কারিগর বিমলের কাছ থেকে অনেকেই প্যারা সন্দেশ তৈরির কৌশল শিখে নেন। সুরেশ তাঁর দোকানের নাম দেন ‘মা নওগাঁ প্যারা সন্দেশ’। এটিই নওগাঁর সবচেয়ে পুরোনো মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত। বংশপরম্পরায় বর্তমানে ওই দোকানের মালিক বৈদ্য রতন দাস (৫৫)।

বৈদ্য রতন দাসের ছেলে সৈকত দাস বলেন, ‘আমরা বংশপরম্পরায় প্যারা সন্দেশ তৈরি করে সরবরাহ করছি। বর্তমানে নওগাঁয় বেশ কয়েকজন প্যারা সন্দেশ তৈরি করলেও আমাদের দোকানের তৈরি প্যারা সন্দেশের খ্যাতি বেশি। বর্তমানে আমাদের কারখানায় অন্যান্য মিষ্টির পাশাপাশি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত প্যারা সন্দেশ তৈরি হয়ে থাকে। আশপাশের জেলা বগুড়া, জয়পুরহাট ও রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টির দোকানদারদের কাছে পাইকারিভাবে প্যারা সন্দেশ বিক্রি করে থাকি আমরা।’

প্যারা সন্দেশ তৈরির কৌশল ও উপকরণ সম্পর্কে সৈকত দাস জানান, ‘প্যারা তৈরির পদ্ধতি খুবই সহজ। এক কেজি প্যারা সন্দেশ তৈরি করতে দরকার হয় প্রায় ছয় লিটার তরল দুধ। এর সঙ্গে এক কেজি চিনি যোগ করা হয়। প্রথম ধাপে তরল দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ক্ষীর। দুধ ও চিনির মিশ্রণে তৈরি ক্ষীর দুই হাতের তালু দিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় প্যারা সন্দেশ। প্রতিটি প্যারা সন্দেশ প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া ও দুই ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।’

নওগাঁর প্যারা সন্দেশের কেজি বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। 

নওগাঁ শহরের ব্রিজের মোড় এলাকায় অবস্থিত নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক বলেন, সাধারণত অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় প্যারা সন্দেশের দাম বেশি। তারপরও এই মিষ্টি প্রচুর বিক্রি হয়। কারণ, এর সঙ্গে সুখ্যাতি ও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন