[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সেচের জন্য কৃষকের বিষপান: ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা না বলায় আবার তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ থেকে কৃষকেরা কার্ডের মাধ্যমে সেচের পানি পান | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সাঁওতাল কৃষক মুকুল সরেন (৩৫) বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, সেচের পানির জন্য হয়রানির শিকার হয়ে তিনি কীটনাশক পান করেছেন। এ ঘটনায় গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু তদন্তের সময় কমিটি ভুক্তভোগী কৃষক মুকুল সরেনের সঙ্গে কথা বলেনি। এ জন্য আজ রোববার ওই কমিটিকে আবার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।

শামীম আহমেদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে কীভাবে নির্বিঘ্নে পানি পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে কোনো সুপারিশ ছিল না। নতুন করে ওই এলাকায় গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলার পর সুপারিশসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠাতে আজ গোদাগাড়ীর ইউএনওকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাঁরা প্রতিবেদন জমা দেবেন।

৯ এপ্রিল দুপুরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পরিচালিত গভীর নলকূপের সেচের পানি না পেয়ে ক্ষোভে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কৃষক মুকুল সরেন। সেদিনই তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কয়েক দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।

এ ঘটনায় গোদাগাড়ীর ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি ১১ এপ্রিল এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে। ওই দিনও মুকুল সরেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার কমিটি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান ও স্থানীয় দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন।

তদন্ত কমিটির কাছে সাঁওতাল সম্প্রদায়কে সেচের পানি দেওয়ার ব্যাপারে অবহেলা করার কথা বলায় মংলা সরেন নামের এক সাঁওতাল কৃষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তদন্ত কমিটির কাছে মংলা সরেন অভিযোগ করেছিলেন, পানি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের সম্প্রদায়কে অবহেলা করা হয়। পরে তদন্ত কমিটির লোকজন চলে আসার পর ওই কৃষককে মারধর করা হয় বলে তদন্ত কমিটির সদস্য বেলাল উদ্দিনের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, তিনিই মংলা সরেনকে ডেকেছিলেন। তখন মংলা সরেন তাঁকে জানান, পাশের একটি গভীর নলকূপের অপারেটর মানিক তাঁকে চড়-থাপ্পড় মেরেছেন। কী জন্য মেরেছেন, এ ব্যাপারে তাঁকে কিছু বলেননি মংলা সরেন। এ বিষয়ে 

ওই এলাকা পরিদর্শনের পর ১১ এপ্রিল ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেছিলেন, তাঁরা ওই প্রকল্পের সব জমিতে নেমে দেখেছেন, সব জমিতে কিছু না কিছু পানি আছে। অন্য চাষিরা বলেছেন, দু-এক দিন দেরিতে হলেও তাঁরা পানি পাচ্ছেন। শুধু একজন বলেছেন, তাঁদের সম্প্রদায়কে অবহেলা করা হয়। ইউএনও বলেন, ‘বয়স্ক ওই লোককে একটু ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে। তিনি হয়তো কিছু খেয়ে এসেছিলেন।’

ওই ব্যক্তির নাম মংলা সরেন। তাঁকে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএমডিএর স্থানীয় সহকারী প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন। পুনঃতদন্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক তাঁকে মৌখিকভাবে বলেছেন। এখনো লিখিত চিঠি হাতে পাননি। তিনি এলাকায় যাবেন। সবার সঙ্গে কথা বলবেন।

গত বছরের ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর বর্ষাপাড়া গ্রামের পাশের নিমঘটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারানডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারানডি সেচের পানি না পেয়ে বিষ পান করেন। এতে অভিনাথ সেদিনই মারা যান। ২৫ মার্চ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রবি। এরপর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়। এবার সেই নলকূপের পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হাশেম আলী ওরফে বাবু নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁর কাছে পানির জন্য হয়রানির শিকার হয়ে মুকুল সরেন বিষ পান করেছেন বলে অভিযোগ।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন