[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বার্ন ইনস্টিটিউটে রোগী সামলাতে হিমশিম

প্রকাশঃ
অ+ অ-

গরম পানিতে দগ্ধ ফারহানকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর মা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারহানের বয়স তিন বছর। শীতের সকালে শিশুটির গোসলের জন্য পাতিলে পানি গরম করেন মা ফাহিমা আক্তার। সেই পানি নেওয়ার সময় ধাক্কা লেগে কিছু অংশ ফারহানের শরীরে পড়ে। এতে মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়। ছোট্ট ফারহান এখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। শরীরের ব্যান্ডেজ আর হাতের ক্যানুলা খুলে দিতে মায়ের কাছে পীড়াপীড়ি করছে। কিন্তু খুলে না দেওয়ায় শিশুটির কান্না যেন থামছে না।

আজ রোববার সকালে মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের এলাকার বাসায় দগ্ধ হয় ফারহান। তার শরীরের ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। সকালেই তাকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এখন সে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। সেখানেই কথা হয় ফারহানের মা ফাহিমা আক্তারের সঙ্গে। পেশায় গৃহকর্মী ফাহিমা ও নির্মাণশ্রমিক হাসান খান দম্পতির একমাত্র সন্তান ফারহান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৮ শতাংশ দগ্ধ হলেও শিশুটি ঝুঁকিতে রয়েছে।

দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ১৬ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনই শীত নিবারণের জন্য গরম করা পানি অথবা আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন শিশু, পাঁচজন ষাটোর্ধ্ব নারী ও একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ইনস্টিটিউট ৫০০ শয্যার। গত আগস্টের আগে অর্থাৎ শীত আসার আগে সেখানে অনেক শয্যা ফাঁকা থাকত। তবে শীত মৌসুম শুরুর পর অনেক বেশি রোগী আসছে হাসপাতালে। তাঁদের অধিকাংশই গরম পানি ও আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। রোগীর চাপ বাড়ার কারণে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী জরুরি বিভাগে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এক সপ্তাহে এ ধরনের রোগী বেশি ফিরে গেছেন।

ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, গত এক বছরে দগ্ধ হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিতে গেছেন ৮৩ হাজার ২৪৫ জন। তাঁদের তথ্য তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে সংরক্ষণ করা হয়। এগুলো হলো গরম তরলে দগ্ধ, আগুনে দগ্ধ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও অন্যান্য। এর মধ্যে গরম তরল পড়ে দগ্ধদের হার ৫৭ শতাংশ। আগুনে দগ্ধ ৩৫ শতাংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও অন্যান্যভাবে দগ্ধ ৮ শতাংশ রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে গেছেন।

শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, গরম পানি বা আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধদের আলাদা করে তথ্য সংগ্রহ করা হয় না। তবে গরম তরলে দগ্ধদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। তবে গরম তরলে দগ্ধদের মধ্যে অধিকাংশই গরম পানিতে দগ্ধ হন। এই শ্রেণিতে দগ্ধদের ৯০ শতাংশই শিশু।

জরুরি বিভাগে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে এস এম আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভর্তি হওয়ার মতো অনেক রোগীকেও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’

ঢাকার বাইরে থেকেও আসছে রোগী
শীতে বার্ন ইনস্টিটিউটে আসা রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগী বেশি। এসব রোগীর বেশির ভাগই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছেন। এমনই একজন কুমিল্লার লাকসামের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরোজা আক্তার। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে খড় পুড়িয়ে শীত নিবারণ করছিল আফরোজাসহ আরও কয়েকটি শিশু। সেখান থেকে জামায় আগুন লেগে দগ্ধ হয় মেয়েটি। শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে তার।

আফরোজার মা শাহনাজ বেগম বলছিলেন, মেয়েটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। একটু পরপর শুধু পানি খেতে চায়।

বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৬ নম্বর শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সান্ত্বনা আক্তার। বৃহস্পতিবার গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার বাসায় রান্নার চুলায় আগুন পোহাতে গিয়ে তিনি দগ্ধ হন। সান্ত্বনার স্বামী নাজমুল ইসলাম জানালেন, তাঁরা মাটির চুলা ব্যবহার করেন। দুর্ঘটনাবশত আগুন লেগে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সান্ত্বনা ঝুঁকিতে আছে।

শীতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে করণীয় কী হতে পারে, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা  বলেন, শীতের সময় গরম পানি পাতিলের পরিবর্তে বালতিতে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে হবে। কম বয়সীদের গরম পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। আর আগুন পোহানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সিনথেটিক কাপড়ে আগুন লেগে গেলে দ্রুত ছড়ায়। আগুন লাগার ক্ষেত্রে পোশাকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে টেলিভিশন ও কমিউনিটি রেডিওগুলোতে ব্যাপক প্রচার চালানো যেতে পারে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন