[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস আজ

প্রকাশঃ
অ+ অ-
ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব সংলগ্ন শহীদ বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২১ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী হানাদার মুক্ত দিবস। স্বাধীনতাযুদ্ধে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ৭নং সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান। লড়াইয়ের ৯ মাসে ঈশ্বরদীর মাধপুর, খিদিরপুর, দাশুড়িয়ার তেতুলতলা, জয়নগরের  মিরকামাড়ী আইকে রোড, ভেলুপাড়া সাঁকো, পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

একাত্তরের ১১ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর অবাঙালি ও কতিপয় দালাল ঈশ্বরদীতে বাঙালি নিধনে মেতে ওঠে। দাদাপুরে শতাধিক বাঙালীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে । বিহারি অধ্যুষিত ফতেহ মোহাম্মদপুর লোকশেডে পাকিস্তানি বাহিনীর ছত্রছায়ায় বিহারিরা ১২ ও ১৩ এপ্রিল অসংখ্য বাঙালিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞে আজিজুল গনি, আব্দুল বারীসহ অসংখ্য বাঙালী শহিদ হন। পাকিস্তানি সেনাদের আগমনের কথা ছড়িয়ে পড়লে নিরাপত্তার জন্য কিছু মানুষ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়। তারা ভেবেছিল, মুসলিম তাই মসজিদে অন্তত হামলা হবে না। কিন্তু হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধনে মসজিদেও হানা দেয়। ১২ থেকে ১৯ এপ্রিলের মধ্যে মসজিদে আশ্রয় নেওয়াদের ১৯ জনকে প্রেসক্লাব-সংলগ্ন কয়লা ডিপোর পাশে  নৃশংসভাবে হত্যা করে খাদে ফেলে রাখে। ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা বাঘইল পশ্চিমপাড়ার একটি বাড়িতে ২৩ জন নর-নারীকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পরে গ্রামবাসী লাশগুলো একটি বিশাল গর্ত করে পুঁতে ফেলে।
জুনের শেষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ঈশ্বরদী প্রবেশ করে। ৮ জুলাই পাকশি এলাকার টেলিফোনের তার কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তারা। পরবর্তীকালে জয়নগরের বিদ্যুৎ টাওয়ারে শক্তিশালী এক্সপ্লোসিভ নিক্ষেপ করে। এছাড়াও ঈশ্বরদীতে বিভিন্ন শান্তিকমিটির দালাল ও নকশালদের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৪ আগস্ট দাশুড়িয়া শান্তি কমিটির দালাল মাওলানা আতাউর রহমান নিহত হয়। পাকুড়িয়াতে দূর্র্ধষ ডাকাত মকছেদ আলীকে গুলি করে হত্যা করে মুক্তিকামী জনতা। এছাড়াও নকশাল ননী সরদারের ছিন্ন মস্তক ছিলিমপুর হাটের বটগাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এদিকে ৬ ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনী প্রবেশের ঘোষণা দিলে কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে পালিয়ে আসা পাকিস্তানি সৈন্যরা ট্যাংক কামান অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদী ঘাঁটি গাড়ে। ১৪ ডিসেম্বর ভারতীয় বোমার আঘাতে ১২নং স্প্যানটি বিধ্বস্থ হলে ও বীর যোদ্ধাদের ব্যারিকেডের মুখে ঈশ্বরদীর ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ঈশ্বরদী লোকোসেড এলাকার নাজিমউদ্দিন স্কুলে একত্রিত হতে থাকে পাক সেনাবাহিনী। এদের সঙ্গে মিলিত হতে থাকে নাটোরে ভারতীয় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া বাহিনী।

 ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মিত্র বাহিনীর বোমার আঘাতে ভেঙে পড়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের একাংশ | ছবি : সংগৃহীত

ইতোমধ্যে ভারতীয় বিগ্রেডিয়ার রাগবীর সিংহ পাল ৪৫৫১ নং বিগ্রেড ঈশ্বরদী পৌঁছে যায়। তারা ঈশ্বরদী ডাকবাংলো, সাড়া মাড়োয়ারি স্কুল মাঠে ক্যাম্প করে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে রশিদ তার অধীনস্ত এনসিও সুবেদার নায়েক নুরুল ইসলামকে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের রেস্টহাউসে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তাব পাঠান।

নুরুল ইসলামকে তারা জানায়, ভারতীয় অফিসার বিগ্রেডিয়ার রাগবীর সিংহ এর সঙ্গে কথা হয়েছে। নাটোর থেকে বিগ্রেডিয়ার মঞ্জুর না আসা পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করবেন না। ১৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী মুক্ত দিবস হলেও ২ দিন সময় চেয়ে ২১ ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করে দেশীয় দোশর খোদাবক্স, খান, ইসমাঈল মওলানা, আঃ কাদের, মুজাহিদ ও হারেজ উদ্দীন এবং পাক সেনারা। ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ ও সশস্ত্র প্রতিরোধে আজকের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় ঈশ্বরদী। বেশ কয়েকজন পাকসেনা ও রাজাকার ঈশ্বরদী শহরের অবাঙালি অধ্যুষিত লোকোসেড এলাকায় আত্মগোপন করে থাকায় বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছে তখনও ঈশ্বরদী শহরে চলে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ।

ঈশ্বরদীর ৬শ ৮৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ভারতে ট্রেনিং নিয়ে লড়াই করেন। এর বাইরে ৬৭ জনের কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ থাকায় তাদের সুবিধা বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯ মাসে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় অবাঙালি, রাজাকার ও পাকসেনাদের হাতে অনেকে নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় কমিটির আহবায়ক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা ইছাহক আলী, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টু, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা আঃ রাজ্জাক,  আজিজ মন্ডল,  রশিদুল আলম বাবু, সাংবাদিক আলাউদ্দীন আহমেদ ও সাংবাদিক মোস্তাক আহমেদ কিরণের সমন্বয়ে একটি দল  প্রায় ৫০টির অধিক বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে আজও অযত্ন অবহেলায় এই গণকবরগুলো সংরক্ষণ করা হয় নি।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন