[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের দলীয় পদ ফিরে পাওয়ার খবর নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

 

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ | ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল প্রতিনিধি: শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া নেতাদের আবেদনের ভিত্তিতে সাধারণ ক্ষমা করা হয়েছে—গত শনিবার ঢাকায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক সভায় এমন ঘোষণা দেওয়ার পর বরিশালের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারীরা অনেকটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। তবে প্রতিপক্ষের নেতারা বলছেন, অব্যাহতির আদেশ স্থগিতের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

পঙ্কজ দেবনাথের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। তিনি তাঁর জবাব দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তাঁর ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে একটি আবেদনও করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পঙ্কজ দেবনাথ ও আবেদনকারী শতাধিক নেতা-কর্মীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আর দলীয় কার্যক্রমে আর কোনো বাধা নেই।

সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার রাতে  বলেন, ‘আমাকে শোকজ দেওয়ার পর জবাব দিয়েছি এবং আবেদনও করেছিলাম।’

ক্ষমা করার বিষয়টি পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেছেন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল খান। আর এতে পঙ্কজ দেবনাথের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করা বিষয়ে দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। কামাল খান বলেন, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাঁকে দলীয় পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর যাঁদের ক্ষমা করা হয়েছে, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাই পঙ্কজ দেবনাথের বিষয়টির সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত নয়।

গত ১১ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পঙ্কজ নাথকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করে কেন্দ্রে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সেখানে অভিযোগ করা হয়, পঙ্কজ দেবনাথ নির্বাচনী এলাকা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দলের মধ্যে বিভেদ এবং নিজের বলয় তৈরি করতে পুরোনো ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করতে খুন, দলীয় নেতা-কর্মীদের মারধর, কুপিয়ে জখম এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের অপমান-অপদস্থ করছেন।

তবে পঙ্কজ দেবনাথ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা জানান, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল খান এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আহমেদসহ দলের একটি অংশ সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে বিরোধিতা করে আসছেন। এর জেরেই পঙ্কজ দেবনাথ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।

তবে কামাল খান বলেন, পঙ্কজ দেবনাথ এলাকায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নিজের বলয় সৃষ্টি করেছেন। দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর এই বলয়ের লোকজনের মাধ্যমে খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন পঙ্কজ দেবনাথ। গত নভেম্বরের প্রথম দিকে তাঁর সংসদীয় আসনের তিনটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্মেলনে দাওয়াত পাননি তিনি। এমনকি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব সম্মেলনে তাঁকে যোগ দিতেও নিষেধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁর সমর্থক ও নেতাদেরও এসব উপজেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। এরপরও তিনি নেতা-কর্মী ছাড়াই এলাকায় নানা অনুষ্ঠান করে নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। ঘনঘন এলাকায় এসে সরকারি ও নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেন।

সম্প্রতি তিন উপজেলার সমর্থক ও নেতারা দলীয় পদ-পদবি থেকে বাদ পড়ায় দলীয়ভাবে পঙ্কজ দেবনাথ আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এখন তাঁর সমর্থনে মাঠে আছেন তাঁর সংসদীয় এলাকার ২১টি ইউনিয়নের ১৫ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, একজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং উপজেলা পরিষদের চারজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাতজন কাউন্সিলর। তাঁদের নিয়েই সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ মাঠে আছেন।

সোমবার ছিল মেহেন্দীগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘সব অপশক্তিকে পরাজিত করে সোনার বাংলা গড়ে তুলব। স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো একের পর এক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে দেশ।’

তবে এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। দলীয় পদ হারানোর পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম এলাকায় ফেরেন এই সংসদ সদস্য। সে সময় তাঁর কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় ব্যাপক মহড়া দেন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন