সরকারি গাছ বেঁচে দলীয় লোকদের খেতে বললেন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি
![]() |
| কেটে ফেলা শিশু গাছ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের কুনাইপাড়া (হিন্দুপাড়া) গ্রামে সড়কের পাশের একটি সরকারি শিশু গাছ কেটেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান (৫২)। বিদ্যুতের তারে সমস্যার কথা বলে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে এ গাছটি কাটা হয়। ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজুর অনুমতি নিয়ে গাছটি কাটা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান। তবে, গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে খড়না ইউনিয়নের কড়িআঞ্জুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে গাছের কাটা অংশগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়। কেটে ফেলা শিশু গাছটির মূল্য ১২ হাজার টাকার বেশি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি রেখেছেন স্থানীয়রা। গাছটি উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আহমেদ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গাছের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের তার গেছে। এতে প্রায়ই বিদ্যুতের সমস্যা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদারের মৌখিক অনুমতি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে গাছটি কেটেছি। পরে গাছটি বিক্রি করে যা হয় তা দলীয় ছেলেদের খেতে বলেছি।’
তবে গাছ কাটার অনুমতির বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেই নাই। গাছ কাটার পরে আব্দুল মান্নান আমাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন। তবে কাটা গাছটি পরিষদে আনা হয় নাই এবং উপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয় নাই; এটা ঠিক।’
এদিকে গাছের কাটা অংশগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় খড়না ইউনিয়নের কড়িআঞ্জুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশের মুদি ব্যবসায়ী মো. জয়নাল হোসেন (৪৫) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ভ্যানে করে কাটা শিশু গাছের গুল এখানে রেখে গেছে অপরিচিত কয়েকজন। আমরা জানতে পেরেছি এগুলো চুরি করা গাছের গুল। গ্রামের লোকজনের হাতে আটকের ভয়ে কেউ এগুলো নিতে আসছেনা। এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার হওয়া দরকার।’
কড়িআঞ্জুল গ্রামের গাছ কাটার শ্রমিক আব্দুল মজিদ (৪০) বলেন, ‘আমাকে ৫ হাজার টাকায় গাছটি কাটার চুক্তি দিছিল বিএনপির নেতা আব্দুল মান্নান। আমরা ১২ জন শ্রমিক গাছটা কাটছি। আব্দুল মান্নান নিজে ভ্যানে দিয়ে গাছের গুল কড়িআঞ্জুল প্রাইমারি স্কুল মাঠে পাঠাইছে।’
গোহাইল ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলী ইমাম ইনোকী বলেন, ‘গোহাইলের ওই সড়কের দুই পাশে আগে প্রচুর গাছ ছিল। এগুলো সরকারি গাছ। বিভিন্ন অজুহাতে অসংখ্য গাছ চুরি করে কেটেছে কিছু দুর্বৃত্ত। এবারে বিদ্যুতের অজুহাতে বড় শিশু গাছ কেটেছে। জনস্বার্থে কাটা গাছ উপজেলা প্রশাসনের কাছে অথবা ইউনিয়ন পরিষদের জিম্মায় না দিয়ে; ঘটনাস্থল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার কথা না। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদ বলেন, ‘গাছগুলো উদ্ধারে লোক পাঠানো হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Comments
Comments