[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

স্বস্তি ফিরছে কয়রা উপকূলে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব কেটে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন উপকূলের মানুষ। কয়রা, খুলনা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কয়রা: বড় কোনো ক্ষতি ছাড়াই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূল পাড়ি দেওয়ায় খুলনার কয়রার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তিন দিন ধরে চরম আতঙ্কে ছিল এ অঞ্চলের লাখো মানুষ।

গতকাল সোমবার রাতের চেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে জোয়ারের উচ্চতা কমেছে। এতে স্বস্তি দেখা গেছে কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদ–নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে। গতকাল জোয়ারের তোড়ে ভেঙে যাওয়া হরিণখোলা বেড়িবাঁধ এলাকাবাসী নিজেরাই সংস্কার করে ফেলেছেন। সিত্রাংয়ের প্রভাব কেটে যাওয়ায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।

কপোতাক্ষ নদের তীরে কয়রা সদর ইউনিয়নের সোনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বলেন, গত রাতের জোয়ারে তাঁদের ঘরের বারান্দায় পানি উঠে গিয়েছিল। সারা রাত পরিবারের সবাই গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইক্লোন শেল্টারে ছিলেন। এখন আকাশ পরিষ্কার, তাই ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক ও আকরাম হোসেন বলেন, তাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। দুই দিন ধরে নদীতে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না। কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। আজ তাঁরা নদীতে নামবেন।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাতের জোয়ারে বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছিল কপোতাক্ষের পাড়ে। তাই দিনের আলো ফোটার আগে থেকেই বাঁধের ত্রুটিপূর্ণ জায়গা মেরামত করেছেন কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের সুতিয়া বাজার এলাকার লোকজন।

হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ আনারুল মোল্যা বলেন, ‘গতকাল সারা রাত একফোঁটাও ঘুম হয়নি। হরিণখোলা সাইক্লোন শেল্টারের ভেতরে বসে ছিলাম। কখন না জানি বাঁধ ভেঙে যায়, এই চিন্তা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে যায়নি। সকালে আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টি নেই, ঝড় নেই। বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’

পাশে থাকা খাদিজা বেগম নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘নদীর পাড়ের মানুষ আমরা। ছোটখাটো ঝড় আসলেই পরানডা ছোট হয়ে যায়। গতকালকের কথা কী আর বলব! তাড়াহুড়া করে সাইক্লোন শেল্টারে এসেছিলাম। এখন ফিরে যাচ্ছি।’ আবুল কালাম নামের আরেকজন বলেন, ‘আপনারা তো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে কত মানুষ, আমরা গিয়ে তো জায়গা পাই না। ঝড় আসলে জেগে থেকে রাত কাটানো আমাদের নিয়তি। তবু স্বস্তি, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’

কয়রা সদর ইউনিয়নেটর গুড়িয়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী সময়ে জোয়ারের উচ্চতা একবার কমা শুরু করলে সাধারণত আর বাড়ে না। এরপর পানির উচ্চতা কমতে কমতে একেবারে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। তাই সিত্রাং ও অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের উচ্চতা আর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা নেই।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী হরিণখোলা এলাকার বাঁধের ধসে যাওয়া অংশটি স্থানীয় লোকজন কোনোরকমে সংস্কার করেছেন। পাউবো কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জরুরিভাবে তা ভালো করে মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সিত্রাংয়ের শঙ্কা কেটে গেছে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান বলেন, সিত্রাংয়ের প্রভাব কেটে যাওয়ায় সকাল থেকে আশ্রিত লোকজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, উপজেলার ১১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার ও অন্যান্য স্থাপনায় আরও ৯ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছিল। এর মধ্যে থেকে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ বাড়িতে ফিরেছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন