পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্য। মঙ্গলবার পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: প্রথমে সঠিক মানুষটিকে বাছাই করেন তাঁরা। লক্ষ্য ব্যবসায়ী, নারী ও বয়স্ক মানুষ। এরপর গতিবিধি অনুসরণ করে সুযোগ বুঝে মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া দেন। শেষে গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক তৈরির পর ছিনতাই করেন।

পাবনায় পরপর এমন তিনটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে পিস্তল, গুলি, ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পাবনা সদর উপজেলার দক্ষিণ মাছিমপুর গ্রামের মাসুদ রানা (৩২), গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার রাগোবেন্দ্রপুর গ্রামের আল-আমিন (৩৬), মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিম খান ওরফে মোর্শেদ খান (৪৯) এবং বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের আবদুর রহিম (৩২)। পুলিশের দাবি, তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, হত্যা ও ডাকাতির একাধিক মামলা আছে।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী জানান, ২২ সেপ্টেম্বর পাবনার দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সেই দিন মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে চক্রটি অস্ত্র দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর ১ অক্টোবর এস এম শামস ইকবাল নামের এক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ১৪ লাখ টাকা তুলে বাড়ি ফিরছিলেন। একই চক্র তাঁকে গুলি করে আহত করলেও টাকা ছিনতাই করতে পারেনি। ৪ অক্টোবর দুপুরে মাহমুদা নামের এক নারী ব্যাংক থেকে ৯ লাখ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে চক্রটি একই ঘটনা ঘটায়।

ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলন। মঙ্গলবার পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পুলিশ সুপার বলেন, ছিনতাইয়ের প্রথম ঘটনার পরে পুলিশ চক্রটিকে ধরতে মাঠে নামে। এর মধ্যেই পরপর তিনটি ঘটনা ঘটায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রোকনুজ্জামান সরকার ও পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অসিত কুমার বসাকের নেতৃত্বে থানা ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সমন্বয়ে একটি দল গঠন করা হয়। তাঁরা বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা ও সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মাসুদ আলম জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই করছিল। নির্দিষ্ট সময়ে ছিনতাইয়ের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা বেছে নিত। সেই এলাকার একজন তাঁদের সোর্স ও সহযোগী হিসেবে কাজ করত। মাসুদ রানা পাবনায় তাঁদের সোর্সের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই মোটরসাইকেল ও পিস্তল দিয়ে তাঁদের সহযোগিতা করেন। শহরে বাড়িও ভাড়া করে দেন। মাসুদ রানা প্রথমে টার্গেট ঠিক করে দিতেন। এরপর বাকি তিনজন ছিনতাই করতেন। কাজ শেষে তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যেতেন।

মাসুদ আলম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চারজনই পাবনায় পরপর তিনটি ছিনতাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের মধ্যে মাসুদ রানার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। বাকিদের আদালতের হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন এ চক্রের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না, সেটা পরিষ্কার হবে।

পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, জেলায় এমন আরও চক্র থাকতে পারে। তাদের খুঁজতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনে কেউ পুলিশের সহযোগিতা চাইলে সেটাও দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।