[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

একটি হুইলচেয়ার পেলে কষ্ট কমবে শারমিনের

প্রকাশঃ
অ+ অ-

লাঠিতে ভর দিয়ে বিদ্যালয়ে যায় রাজশাহীর বাগমারা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন সুলতানা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বাগমারা: নীল ও সাদা পোশাকে বাঁশের লাঠিতে ভর দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিল এক কিশোরী। তার সঙ্গে ব্যাগ হাতে হাঁটছেন মাঝবয়সী এক নারী। কিছুক্ষণ অনুসরণ করে বোঝা গেল, কিশোরীটি স্কুলশিক্ষার্থী। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার জন্য তাকে প্রতিদিন এভাবেই স্কুলে যেতে হয়। পাশে ব্যাগভর্তি বই হাতে হাঁটা নারী তার মা।

সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে কথা বলে জানা গেল, এই স্কুলছাত্রীর নাম শারমিন সুলতানা (১৪)। সে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাগমারা গ্রামের দিনমজুর শাহার আলীর মেয়ে। শারমিন বাগমারা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।

শারমিন সুলতানা বলে, ‘প্রতিদিন কষ্ট করে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। লাঠিতে ভর করে যাতায়াতের কারণে পায়ে ব্যথা করে। ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতেও পারি না। লেখাপড়ার জন্য এ কষ্ট মেনে নিয়েছি।’ শারমিন জানায়, প্রথম দিকে বিদ্যালয়ে বন্ধুরা একটু অবহেলা করলেও এখন আর করে না। তার প্রতিবন্ধিতাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে বন্ধুরা তাকে এখন সহযোগিতা করে।

শারমিনের বাবা শাহার আলী জানান, দুই কন্যাসন্তানের মধ্যে শারমিন বড়। জন্মের পরই তার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। হাত-পা ও শরীরের গঠনও অস্বাভাবিক হয়। সাত-আট বছর পর্যন্ত নানা জায়গায় চিকিৎসা করান। তবে চিকিৎসকেরা জানান, এ প্রতিবন্ধিতা স্বাভাবিক হবে না। এ জন্য পরিস্থিতি মেনে নিয়ে মেয়েকে শিক্ষিত করানোর সংকল্প করেন তাঁরা। শারমিনকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঠিকমতো হাঁটতে পারত না বলে মা–বাবা প্রতিদিন কোলে করে পালাক্রমে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতেন ও আনতেন। প্রাথমিকের পাঠ চুকিয়ে বাগমারা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয় শারমিন। এখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মা–বাবার কষ্ট হওয়ায় এখন আর কোলে চড়ে বিদ্যালয়ে যায় না সে। টাকার অভাবে কোনো হুইলচেয়ার বা অন্য কোনো বাহন কিনে দিতে পারেনি তার পরিবার। এ জন্য বাঁশের লাঠিই ভরসা।

শারমিনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঁশের লাঠি নিয়ে শারমিন বিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। সমস্যা হওয়ার কারণে বই-খাতা বহন করতে পারে না। কিছুক্ষণ পর পরিবারের কেউ বই-খাতার ব্যাগ বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, ‘লাঠিতে ভর করে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কারণে সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। হাতে শক্তি না থাকার কারণে বই-খাতা বহন করতে পারে না। মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার আগ্রহ আমাদের আছে। মেয়েটা শিক্ষিত হলে আমাদের কষ্ট সার্থক হবে।’

শাহার আলী বলেন, ‘টাকার অভাবে মেয়েকে হুইলচেয়ার কিনে দিতে পারিনি। দিনমজুরি করে কোনোরকমে সংসার চালাই। একটা ভালো মানের হুইলচেয়ার পেলে মেয়ে নিজেই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারত। পরিবারের লোকজনদের দুর্ভোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি মেয়েটাও শান্তি, স্বস্তি পেত।’

বাগমারা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল জব্বার বলেন, শারমিন সুলতানা মেধাবী ছাত্রী। তার হাতে সমস্যা থাকার কারণে দ্রুত লিখতে পারে না। এ জন্য পরীক্ষার সময় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধিতাকে উপেক্ষা করে সে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে, এটা অনেকের জন্যই অনুকরণীয়।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন