[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

আলামত নষ্টের অভিযোগে ধর্ষণ মামলার দায়িত্ব থেকে ওসিকে অপসারণ, তদন্ত কমিটি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বগুড়া জেলার মানচিত্র
প্রতিনিধি বগুড়া ও ধুনট: বগুড়ার ধুনট উপজেলায় একটি ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্ট করার অভিযোগে উঠেছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে। বাদী ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বগুড়ার পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে ওসিকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ অভিযোগ তদন্তে আগে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল রশিদকে এর প্রধান করা হয়েছে। আবদুর রশিদ সোমবার রাতে বলেন, ‘কমিটিকে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে চেষ্টা করছি, দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেওয়ার।’

বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি)। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তভার ডিবিকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষক মুরাদুজ্জামান ওরফে মুকুলকে (৪৮) গত বছরের অক্টোবরে ধুনট উপজেলার একটি এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ওই বাসার মালিকের মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ওই ছাত্রীর মা-বাবা পেশাগত কারণে বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে থাকেন। ওই শিক্ষকের স্ত্রীও কর্মসূত্রে দিনে বাইরে থাকেন। এই সুযোগে মুরাদুজ্জামান একদিন কৌশলে ওই স্কুলছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে মুঠোফোনে ছবি তোলেন। এরপর ওই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে কয়েকবার ধর্ষণ করেন।

১২ মে আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী চিৎকারে দেয়। এ সময় স্বজনেরা ছুটে হলে মুরাদুজ্জামান পালিয়ে যান। এরপর ওই ছাত্রীর কিছু অশালীন ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন মুরাদুজ্জামান। পরে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গত ১২ মে ধুনট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ মুরাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার ও অশালীন ভিডিও ধারণ করা মুঠোফোন জব্দ করে। মুরাদুজ্জামান বর্তমানে বগুড়া কারাগারে আছেন।

বাদীর লিখিত অভিযোগে থেকে জানা যায়, মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা নিজেই। ১৮ মে আসামি মুরাদুজ্জামানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর হেফাজত থেকে আরও একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। ওই মুঠোফোনে পাওয়া কয়েকটি অশালীন ভিডিও ক্লিপ সিডিতে কপি করে নেন ওসি। এসব সিডি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোর কথা।

সিডিগুলো না পাঠিয়ে শুধু উদ্ধার হওয়া দুটি মুঠোফোন সিআইডিতে পাঠিয়েছেন। আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা মামলার আলামত নষ্ট করান। গত ১৯ মে জব্দ করা মুঠোফোন দুটি তিনি আদমদীঘি থানার একজন উপপরিদর্শকের কাছে পাঠিয়ে ফোনে থাকা সব ভিডিও ক্লিপ ও তথ্য মুছে ফেলা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

জানতে চাইলে ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা মুঠোফোনে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। মুঠোফোন দুটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে পাঠানোও হয়েছে। এরপরও তদন্ত যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়—সে জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তভার ডিবির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ২ আগস্ট ওসির বিরুদ্ধে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা মুঠোফোন থেকে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র অন্যকে দেখানো এবং মুছে ফেলার অভিযোগ আনেন মামলার বাদী। অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, জব্দ করা মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ছিল কি না, তা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদর দপ্তরের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষা ও তদন্তে মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণের প্রমাণ পাওয়া গেলে আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় আরও মামলা হবে। এ ছাড়া মুঠোফোন থেকে ভিডিও মুছে ফেলার দায়ে ওসির বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন