[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা, ১২০ টাকাতেই কাজে ফিরছেন চা-শ্রমিকেরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

আজ সোমবার সকাল থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন চা–শ্রমিকেরা। কাজে যাওয়ার জন্য জড়ো হওয়ার ছবিটি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা–বাগান থেকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল:  মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত চা-শ্রমিকেরা বর্তমান মজুরি ১২০ টাকাতেই কাজে ফিরছেন। গতকাল রোববার গভীর রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রশাসন ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে এক আলোচনা শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়। দুই পক্ষ যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা প্রমুখ।

স্থানীয় প্রশাসন ও সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের চা-বাগানগুলোয় দেখা দেওয়া শ্রমিক–অসন্তোষ নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা প্রশাসন এ সভা ডাকে। সভায় প্রশাসন, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাত নয়টায় সভা শুরু হয়ে শেষ হয়েছে রাত তিনটার দিকে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের প্যাডে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে সভার সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আজ সোমবার কাজে যোগ দেবে। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকেরা কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পরবর্তী সময়ে মজুরির বিষয়টি নির্ধারিত হবে। আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার জন্য চা-শ্রমিকনেতারা আবেদন করেছেন, যা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানানো হবে। চা-শ্রমিকের অন্যান্য দাবি লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হবে; সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। আর বাগানমালিকেরা চা-বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন।

বিবৃতিতে সই করেছেন প্রশাসনের পক্ষে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, সহসভাপতি পঙ্কজ কন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী প্রমুখ।

বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা আজ সকালে সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কাল রাত নয়টায় সভা শুরু হয়েছিল। শেষ হতে তিনটা বাজছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ১২০ টাকাতেই শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবেন। নেত্রীর আদেশ আমরা পালন করব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। যে কয় দিন আন্দোলন হয়েছে, সব দিনের হাজিরা দেওয়ার লিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, সভায় মালিকপক্ষের কেউ ছিলেন না। আজ কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি সবার জানতে দেরি হতে পারে, কোনো কোনো বাগানে কাজে যোগ দিতে দুপুর ১২টাও বাজতে পারে।

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথা অনুযায়ী প্রতি দুই বছর পরপর চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশিয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়। দর-কষাকষি করে চা-শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রায় প্রতিবারই চুক্তির মেয়াদের অনেক পরে নতুন চুক্তি করা হয়ে থাকে। এবারও মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। ১৯ মাসেও মজুরির সমাধান হয়নি। চা-শ্রমিক ইউনিয়ন দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকার দাবি করেছে। মালিকপক্ষ তা না মানায় ৯ আগস্ট থেকে সারা দেশের ১৬৬টি চা-বাগানে চা-শ্রমিকেরা কর্মবিরতির আন্দোলনে নামেন।

এদিকে গত শনিবার সরকারপক্ষ থেকে এক বৈঠক শেষে ১৪৫ টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা বৈঠকে সিদ্ধান্ত মেনে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেন। কিন্তু চা-শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন ভ্যালি (কয়েকটি বাগান নিয়ে একটি ভ্যালি) কমিটি, চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটিসহ সাধারণ শ্রমিকেরা এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। এরপর জেলা প্রশাসন গতকাল রোববার রাতে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘শ্রমিকেরা নতুন মজুরি নেবেন না। তাঁরা ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী যে মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন, তাঁরা সেটা মেনে নেবেন। চা-শিল্পের স্বার্থ বিবেচনা করে তাঁরা আজ থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন