শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
![]() |
| শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে হত্যাকারীরা মেতে উঠেছিল পৈশাচিক উল্লাসে। আমরা হারিয়েছিলাম দেশের কৃতি সন্তানদের। বাঙালি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে দিনটিকে | ছবি: সংগৃহীত |
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মমভাবে হত্যা হন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। সেই অনিবার্য পরাজয়ের আগে ঘাতক বাহিনী মরণকামড় দিতে চেয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এই কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র দেশি রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। এরা ঘাতক সেনাদের সঙ্গে মিলে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিল এবং নিরীহ মানুষগুলোকে শনাক্ত করেছিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরের বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অনেকের হাত ও চোখ বাঁধা ছিল, শরীরে ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। এই মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের দুটি পর্যায় ছিল। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদাররা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ মানুষদের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসককেও হত্যা করে। এরপর সারা দেশে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক ও সংস্কৃতিসেবীদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করতে তালিকা করে হত্যা চালায়। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের সম্ভাবনাময় তরুণ। আজ তাঁদের স্মৃতি স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচি
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

Comments
Comments