সমাবর্তন বর্জনের আহ্বান সাবেক শিক্ষার্থীদের, কঠোর অবস্থানে রাবি প্রশাসন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশের সংবাদ সম্মেলন। শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, সমাবর্তনের অতিথি নির্বাচন ও সময় ঠিক করার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হয়নি। পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আবার চালু করার দাবি জানালেও প্রশাসন কোনো সাড়া দেয়নি।

আজ শনিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ ঘোষণা দেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ সময় ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের রাসেল কবির ও ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ আলী উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদলানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুই দফা সময় পরিবর্তনের পর গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তনের নতুন তারিখ ঘোষণা করে। এতে সভাপতি হিসেবে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম ফায়েজকে রাখার কথা জানানো হয়। অতিথিদের নাম ঘোষণার পর থেকেই সাবেক শিক্ষার্থীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ও ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামে ফেসবুক গ্রুপে অনেকেই সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে সমাবর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন বিলম্বের পর এখন জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ই-মেইলে স্মারকলিপি পাঠিয়ে অতিথি নির্বাচন ও সময় পুনর্বিবেচনা এবং রেজিস্ট্রেশন আবার চালু করার আবেদন জানানো হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায়নি।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, অতিথিদের ব্যক্তিগতভাবে অসম্মান করার কোনো উদ্দেশ্য তাঁদের নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, ঐতিহ্য ও মর্যাদার জায়গা থেকে তাঁরা অতিথি নির্বাচনে অসন্তুষ্ট। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অতিথিদের পাওয়া সম্ভব না হলে নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে সমাবর্তনে অতিথি করার প্রস্তাবও তাঁরা দিয়েছেন। একই সঙ্গে জানতে চান, সমাবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া ফি কোন ব্যাংকে জমা ছিল, সেখান থেকে কত লভ্যাংশ পাওয়া গেছে এবং পুরো বাজেট কীভাবে ব্যয় হচ্ছে—এসব তথ্য স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করতে হবে।

ডিসেম্বরের ব্যস্ত সময় বিবেচনায় অনুষ্ঠানের সময় পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সাবেক এই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া থেকে অনেক শিক্ষার্থী বাদ পড়েছেন। তাঁদের আবার রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন। তিনি পৃথিবীর বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত থেকেছেন এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হয়েছেন। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁকে পাচ্ছি না—এতে আমরা হতাশ হয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা এ সমাবর্তন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি প্রশাসন আমাদের উপেক্ষা করে সমাবর্তন আয়োজন করতে যায়, তবে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায়ভার প্রশাসনের ওপরই বর্তাবে। অতিথিদের সঙ্গে কোনো অসম্মানজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায়ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।’

তবে যথাসময়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমাবর্তনে আচার্য বা সরকারপ্রধান উপস্থিত থাকেন—এমন নয়। এ বছরের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি শিক্ষা উপদেষ্টাকে মনোনীত করেছেন। অতিথিদের আমন্ত্রণ, ক্যাম্পাস সৌন্দর্যবর্ধন ও ভেন্যু তৈরির কাজ অনেকটাই শেষ হয়েছে। এখন এ নিয়ে পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।