গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত, উন্নতি হলে বিদেশে চিকিৎসা
নিজস্ব প্রতিবেদক![]() |
| ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হতে পারে।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের আজ রোববার সকালে এ কথা জানান। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির পাশে রয়েছেন তিনি।
রোববার সকাল ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওসমান হাদি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকেরা তাঁকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানিয়েছেন। সেই সময়সীমা আগামীকাল সোমবার রাতে শেষ হবে।
আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘ওসমান হাদি এখনো ডিপ কোমায় আগের অবস্থাতেই আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তবে ইন্টারনাল রেসপন্স রয়েছে।’
ওসমান হাদিকে তাঁর পরিবার ও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। অবস্থা বিদেশে নেওয়ার মতো উন্নতি হলেই তাঁকে নেওয়া হবে।
গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বিজয়নগরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, একটি গুলি ওসমান হাদির কানের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে মাথার বাঁ পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁর প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করেন।
সেদিন সন্ধ্যায় ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খালেদা জিয়া ও ওসমান হাদির খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অনেকে যাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ বিভিন্ন জেলা থেকেও এসেছেন।
লন্ডনপ্রবাসী ভাইকে নিতে ঢাকায় আসা সিলেটের সোহেল আহমেদকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘হাদি ভাইয়ের খোঁজ নিতে এসেছি। আর বেগম খালেদা জিয়াও এই হাসপাতালে আছেন।’
দুজনকে নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ওসমান হাদি একজন প্রতিবাদী মানুষ। যারা দেশের ভালো চায় না, তারা তাঁকে মেরে ফেলতে চাইছে। একটি নিরীহ মানুষকে এভাবে মেরে ফেলতে চাওয়াটা খুবই নৃশংস। এই ঘটনাকে মেনে নিতে পারছি না। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা। দেশে তাঁর প্রয়োজন এখনো অনেক। দুজনই এখন এই এভারকেয়ার হাসপাতালে। আমরা তাঁদের জন্য দোয়া করি, তাঁরা যেন সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।’
জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকা ওসমান হাদি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন এবং পতিত আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে সরব হন। কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে তিনি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালাচ্ছিলেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিনই তাঁকে গুলি করা হয়।
ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের জন্য পতিত আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন তাঁর সমর্থকেরা। এই হামলাকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি এই হামলার নিন্দা জানিয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ওসমান হাদির ওপর হামলার সন্দেহভাজন হিসেবে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান নামে একজনকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। হামলাকারীর বিষয়ে তথ্য দিতে সরকার ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। হামলাকারীরা যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছিল, তা শনাক্ত করে এর মালিককে আটক করার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।

Comments
Comments