মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: আরও তিনজন জন গ্রেপ্তার, ৬ আসামি রিমান্ডে
![]() |
| ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় বিস্ফোরণে একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার ঢাকার মুগদা ও বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শাহিন ওরফে আবু বকর ওরফে মুসা ওরফে ডিবা সুলতান (৩২), মো. আমিনুর ওরফে দরজি আমিন (৫০) ও মো. শাফিয়ার রহমান ফকির (৩৬)। এ নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী। আগে গ্রেপ্তার তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন করে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তিনজন পুরুষ আসামিকে সাত দিন করে এবং তিনজন নারী আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি আরও বলেন, মামলার প্রধান আসামি আল-আমিন শেখ ওরফে শেখ আল-আমিন এখনো পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার একতলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটির দুই পাশের দেয়াল উড়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিস্ফোরণের ঘটনায় মাদ্রাসার পরিচালক আল-আমিন শেখ (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ককটেলসদৃশ বস্তু, বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য এবং বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রায় তিন বছর আগে মো. হারুনুর রশীদ বাড়িটি ভাড়া নেন। পরে তিনি তাঁর বোন আছিয়া ও ভগ্নিপতি আল-আমিন শেখকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। হারুনুর রশীদ মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় যেতেন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় গত শনিবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সাতজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ছয় থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গত শনিবার প্রথম দফায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান। তাঁরা হলেন মাদ্রাসার পরিচালক আল-আমিনের স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার (৩০) এবং আসমানী খাতুন ওরফে আসমা (২৪)। গতকাল আরও তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানানো হয়।
ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়া রিমান্ড আবেদনে পুলিশ জানায়, প্রথমে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তাঁরা এবং পলাতক আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি)-এর সমর্থক। পলাতক আসামি আল-আমিন এবং গ্রেপ্তার শাহিন একাধিকবার জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহসহ তাদের সমর্থন, মদদ ও প্ররোচনা দিতেন।
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হুমকি দেওয়াই ছিল আসামিদের উদ্দেশ্য।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জহুরুল ইসলাম রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে জানান, মামলার প্রধান আসামি আল-আমিন ঘটনার আগের দিন সারা রাত বোমা তৈরি করেন। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মাদ্রাসা ভবনটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জহুরুল ইসলাম আরও জানান, আল-আমিন শেখ, তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা ছিল।
গ্রেপ্তার আসামি আসমানী খাতুন একসময় জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলায় সাত মাস কারাভোগ করেছিলেন। অন্য আসামি শাহিনের বিরুদ্ধেও জঙ্গি সম্পৃক্ততার মামলা রয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য কোথা থেকে আনা হয়েছে এবং নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, এসব বিষয় জানার জন্য আসামিদের রিমান্ড প্রয়োজন বলে আদালতে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

Comments
Comments