অবরোধ চলবে, রাতেও শাহবাগে অবস্থান

হাদির খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। রাত ১টা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

শরিফ ওসমান বিন হাদির খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

শুক্রবার দুপুরে শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার পর রাতে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এই ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সারা রাত এখানে বসে থাকব। আমরা কম্বল পাঠিয়েছি। হাদি ভাই জীবিত থাকতে এই কম্বল বস্ত্রহীনদের জন্য কিনেছিলেন, কিন্তু তিনি তা পৌঁছে দিতে পারেননি। আমাদের সুস্থ থাকতে হবে। কর্মসূচি শেষ হলে সেই কম্বল বস্ত্রহীনদের কাছে পৌঁছে দেব।’

আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, সরকারের উপদেষ্টারা জনগণের সামনে না আসা পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগ ছাড়বেন না। শুধু উপদেষ্টা এলেই হবে না; হত্যার পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী ও ভারতে পালাতে সাহায্যকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথে অবস্থান চালিয়ে যাবেন।

অবরোধ থাকলেও আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি আটকাবেন না। আল জাবের বলেন, ‘সকাল নয়টা থেকে আমরা চারপাশে অবস্থান নেব, পরীক্ষার সুযোগ দেব। কিন্তু অবরোধ তুলে নেব না। পরীক্ষার নামে অবরোধ তুলে নেওয়া যাবে না।’

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী আজ জুমার নামাজের পর শাহবাগে অবস্থান নেন মঞ্চের নেতা–কর্মীরা। পরে তারা টানা অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে শাহবাগের আশপাশের রাস্তায় যানজট তৈরি হয়।

কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে আরও মানুষও যোগ দিয়েছেন। বিকেলে মঞ্চ ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশের জনগণকে শহীদ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগে আসার আহ্বান জানায়।

শাহবাগে অবস্থান নিয়ে ওসমান হাদির ভাই শরিফ ওমর বিন হাদি বলেন, দাবি না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে নেমেছি, বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না। তবে আরও কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব। রাষ্ট্রের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগে বলতে চাই, আমাদের বাধ্য করবেন না ক্যান্টনমেন্ট বা যমুনা ঘেরাও করতে।’

আজ সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘যতক্ষণ শহীদ হাদি হত্যার পেছনে যাঁরা জড়িত—পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী—তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। আজ শাহবাগ অবরোধ করেছি। আগামীকালও অবরোধ চলবে। সারা বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসছে।’

রাত সোয়া একটার সময়ও শাহবাগ মোড়ে মঞ্চের নেতা–কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। তারা হাদি হত্যার বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন—‘বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’; ‘সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চাই বাংলাদেশ’।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুখ ওসমান হাদি গত বছরের আগস্টে ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন। ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন তিনি।

১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ২০ ডিসেম্বর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে তাঁর জানাজা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে দাফন করা হয়।

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কিছু ব্যক্তিকে পুলিশ ও র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তবে গুলিবর্ষণকারী হিসেবে চিহ্নিত ফয়সাল করিম মাসুদ এখনও অধরা। তাঁর বাবা, মা, স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি ভারতে পালিয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।