[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাংলাদেশ বিষয়ে ভারত আগের অবস্থানেই

প্রকাশঃ
অ+ অ-
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভিডিও থেকে নেওয়া | ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বিষয়ে আগের অবস্থানেই রয়েছে ভারত। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি, নির্বাচন ও রাজনৈতিক অবস্থা, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের এই অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রায় ৩৫ মিনিটের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে ১৫টির বেশি প্রশ্ন করা হয়।

তবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশ মিশনের উদ্দেশে হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভ ও হামলা এবং বড়দিনে খ্রিষ্টানদের ওপর হামলার বিষয়ে ব্রিফিংয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি। এমনকি ব্রিফিংয়ের আগের দিন আসামে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে এবং পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ করেন হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থকেরা।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ সরকার বারবার নাকচ করে আসছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে না দেখানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে দিল্লিকে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সরকার।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পরিবর্তন মেনে নেওয়া কঠিন হয়েছে।

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং দুজন হিন্দু ব্যক্তির হত্যার ঘটনা নিয়ে ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়।

জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ সংখ্যালঘুদের ওপর উগ্রবাদীদের ধারাবাহিক সহিংসতা ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। তিনি ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার প্রত্যাশা প্রকাশ করেন।

জয়সোয়াল দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৯০০টির বেশি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনাকে কেবল ‘মিডিয়া অতিরঞ্জন’ বা ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাঁর ভাষায়, ‘সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট।’

বাংলাদেশে ‘ভারতবিরোধী প্রচারণা’ এবং দুই দেশের হাইকমিশনারদের তলব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জয়সোয়াল বলেন, বাংলাদেশে চলমান ভারতবিরোধী প্রচারণা একটি ‘মিথ্যা আখ্যান’। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের।

বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জয়সোয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে আমাদের অবস্থান শুরু থেকেই স্পষ্ট এবং এতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ তিনি জানান, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।

জয়সোয়াল বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিষ্কার। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে, যা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।’

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকার যদি আওয়ামী লীগকে (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) বাদ দেয়, সে ক্ষেত্রে ভারত নির্বাচন মেনে নেবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারত এমন একটি নির্বাচন চায়, যা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং যেখানে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকবে।

২০১৮ সাল থেকে লন্ডনে বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ এবং বিএনপি নেতার দেশে ফেরার আগে ভারতের ছাড়পত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়সোয়াল বলেন, ভারত বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে সমর্থন করে। বিএনপি নেতার লন্ডন থেকে ফেরাকেও সেই প্রেক্ষাপট থেকেই দেখা উচিত।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে ভারত ছিল তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। নয়াদিল্লির সমর্থন আওয়ামী লীগকে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন পার করতে সহায়তা করেছিল।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের আগে ও পরে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতকে একাধিকবার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। তবে ভারত এতে সাড়া দেয়নি।

এ বিষয়ে ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হলে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ভারত সাধারণত আইনের চোখে পলাতক ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এ ধরনের প্রক্রিয়ায় বহু আইনি ধাপ ও জটিলতা থাকে। বাংলাদেশের অনুরোধের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যে পর্যায়ে ছিল, সেখানেই আছে।’

ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ভারতের জন্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানি যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি এবং পাকিস্তানি নৌবাহিনী প্রধানের সফর নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

জয়সোয়াল বলেন, ভারত এসব বিষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব এবং দুই দেশের হাইকমিশনারদের পাল্টাপাল্টি তলব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়সোয়াল তা ‘মিথ্যা আখ্যান’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের।

বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে ভারতের বিনিয়োগ এবং ঋণচুক্তির বর্তমান অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। পাশাপাশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগের কারণে ভারত আর্থিক সহায়তা বা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করছে কি না, তা জানতে চান সাংবাদিকেরা।

জয়সোয়াল বলেন, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ, যা মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে উঠেছে। পরিস্থিতি কিছুটা বদলালেও ভারত উন্নয়ন সহযোগিতা ও আর্থিক সম্পর্ক নিয়ে ইতিবাচক থাকতে চায় এবং বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দেয়।

ঢাকায় কয়েকটি প্রধান সংবাদপত্রের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং এ বিষয়ে ভারতের কোনো মন্তব্য আছে কি না—তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে একটি সম্পাদকীয়তে ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। তবে রণধীর জয়সোয়াল এ দুটি প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের বর্তমান সংকটের মূল কারণ হলো, চব্বিশের বিপ্লবকে ভারত মেনে নিতে পারেনি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি বড় বাঁক। সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থেই এই পরিবর্তন মেনে নিতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের একে অন্যের ভালো প্রতিবেশী হিসেবে থাকতে হবে, যার লক্ষ্য হবে দুই দেশের মানুষের কল্যাণ। সে জন্য সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত সব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন