[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জামালপুর শহরে নদ ভরাট করে রাস্তা, দায় বিএনপি নেতার

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বালু বিক্রির জন্য ব্রহ্মপুত্র শাখা নদ ভরাট করে আড়াআড়ি রাস্তা নির্মাণ। গত বুধবার সকালে জামালপুর শহরের চালাপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

জামালপুর শহরের চালাপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা ভরাট করে আড়াআড়িভাবে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূল নদ থেকে বালু তুলে বিক্রি সহজ করতে এবং চরের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করতেই এ রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন এই পথে বালুবাহী যানবাহন চলাচল করবে।

বিএনপির ওই নেতার নাম মিজানুর রহমান। তিনি জামালপুর জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এই রাস্তা নির্মাণ কমিটির সভাপতিও মিজানুর।

শহরের পাথালিয়া থেকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদের এই শাখা মূল নদের সঙ্গে যুক্ত। নদটি একদম শহরের ঘেঁষে অবস্থান করছে। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন সময় এখানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিত। ২০১৩ সালে শহরের ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নদের ডান তীরে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। পরে ২০২০ সালে শহরের যানজট কমাতে এ শাখা নদের তীর ঘেঁষে পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার সড়ক তৈরি করা হয়। সড়কের চালাপাকা অংশে পাউবোর বাঁধের ওপর বালু ফেলে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিগত সরকারের আমলেও এই শাখা নদের বিভিন্ন স্থানে ভরাট করে দখল করা হয়েছিল। নদটির তমালতলা অংশেও ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চলছে। কিছু মাটি ইতোমধ্যে ফেলা হয়েছে। প্রশাসনের নজরদারিতেও রহস্যজনক কারণে দুই জেলার সীমানার জটিলতার অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসন নদ রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও রেলিং ভেঙে ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।

—জাহাঙ্গীর সেলিম, সভাপতি, জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটি

গত বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এ শাখা নদের তীর ঘেঁষে পুরোনো ফেরিঘাট থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত সড়কের চালাপাড়া অংশে শহর রক্ষা বাঁধের রেলিং ভেঙে বালু ফেলা হয়েছে। নদের দক্ষিণ পাশে শেরপুর জেলার চরপক্ষীমারী অংশেও ড্রেজার মেশিনের পাইপ বসানো রয়েছে। সেই পাইপ দিয়ে নদে বালু ফেলা হচ্ছে। কিছু অংশে নদে বালু ফেলে ভরাটও করা হয়েছে।

সড়কের ডান পাশে আগে একটি সুন্দর ফুটওভার ছিল। বিকেলবেলায় মানুষ সেই ফুটওভারের ওপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন। কিন্তু ফুটওভারটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

বালু ভরাটের ছবি তুলতে গিয়ে ভরাট কাজের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ছুটে আসেন। তাঁদের মধ্যে একজন রফিক মিয়া বলেন, 'এই রাস্তা সবার জন্য দরকার। চরের লোকজন যাতায়াত করতে পারছে না। রাস্তাটি কে তৈরি করছেন?'— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানসহ অনেকেই আছেন।'  

শহরের চালাপাড়া এলাকার এক নারী বাসিন্দা বলেন, 'আমার বাড়ির একদম সামনেই বাঁধের রেলিং ভেঙে রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছে। এই সড়কের নিচ দিয়ে আমার বাড়ির পানি যাওয়ার পাইপও রয়েছে। তারা পাইপের মুখসহ ভরাট করে ফেলেছে। আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা কোনো কথাই শোনেনি। হঠাৎ কেন এমন রাস্তা তৈরি হলো?' 

এ বিষয়ে মিজানুর রহমান দাবি করেন, 'জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের অনুমতি নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি কালভার্ট নির্মাণ করব, যাতে পানিনিষ্কাশনে কোনো সমস্যা না হয়।' 

সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হলে জামালপুর শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

—নকিবুজ্জামান খান, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, জামালপুর

এই রাস্তা কি বালু বিক্রির জন্য করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে মিজানুর বলেন, 'এই ধরনের কাজের সঙ্গে আমি কখনোই যুক্ত হইনি। সত্যিকার অর্থে সেখানে অনেক গরিব মানুষ থাকে, তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এই রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।' 

তবে সেখানে যাঁরা থাকেন, তাঁরা শেরপুর জেলার বাসিন্দা। তখন প্রশ্ন করা হয়, 'তাহলে এখানে আপনি কেন রাস্তা নির্মাণ করছেন?'— মিজানুর তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

জামালপুরের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, 'জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও রেলিং ভেঙে প্রশাসনের নাকের ডগায় ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। অথচ জামালপুর ও শেরপুর জেলার সীমানার জটিলতা দেখিয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।' 

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, 'ওই স্থানে রাস্তা নির্মাণের খবর পেয়ে সরেজমিনে দেখা করেছি। সেখানে যেন কোনোভাবেই রাস্তা তৈরি না হয়, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কারণ, জামালপুর শহরের সব পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থার একমাত্র ওই শাখা নদ। এই নদ দিয়ে পুরো বছর পানি নিষ্কাশন হয়। যদি সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়, শহরের অভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা আছে।' 

জামালপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইউসুপ আলী বলেন, 'সম্প্রতি এই জেলায় আমি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে আপনার কাছে শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার ম্যাজিস্ট্রেটরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ওই অংশের বেশির ভাগ শেরপুর জেলার মধ্যে পড়ে, আর ড্রেজার মেশিনও শেরপুর অংশে রয়েছে। তাই আমি শেরপুর জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানিয়েছি। যেটুকু অংশ জামালপুরের, সেখানে কোনোভাবেই রাস্তা নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন