[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নিরাপত্তায় গানম্যান পেলেন নাহিদ, হাসনাত, সারজিস ও জারা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, হাসনাত আবদুল্লাহ ও তাসনিম জারা | গ্রাফিক্স: পদ্মা ট্রিবিউন

জুলাই যোদ্ধা, সমন্বয়ক, সংসদ-সদস্য প্রার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী (গানম্যান) দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই তালিকায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রধান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়েছেন।

আবেদনের ভিত্তিতে শিগগিরই কয়েকজন রাজনীতিককে গানম্যানসহ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে বিএনপি মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, পাবনা-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাফির তুহিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদসহ আরও বেশ কয়েকজন।

এ ছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির পরিবারকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। হাদির এক বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান। পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গোষ্ঠী নির্বাচন বানচাল করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।

জানা গেছে, জুলাই গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া সারা দেশের বহু যোদ্ধা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দাবি করেছেন। গুরুত্ব বিবেচনায় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হলেও সবাইকে গানম্যান দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল পুলিশের নেই।

আবার যারা গানম্যান চেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই শিক্ষার্থী। তাঁদের ব্যক্তিগত যানবাহন নেই। বেশির ভাগই রিকশা বা গণপরিবহনে চলাচল করেন। এসব কারণে তাঁদের গানম্যান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সরকার বিষয়টি সহনশীলভাবে বিবেচনা করছে।

জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন এমন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও সমমনা দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়েও ভাবছে সরকার। এরই মধ্যে কয়েকজনের আবেদন গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চলছে। অনেকেই গানম্যানের পাশাপাশি অস্ত্রের লাইসেন্সও চেয়েছেন। অস্ত্রের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকেও গানম্যান দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, গানম্যান চাওয়া হয়েছে অনেকের জন্য। পুলিশের পক্ষে এত জনবল সরবরাহ করা কঠিন। যাদের ‘পটেনশিয়াল থ্রেট’ রয়েছে, মূলত তাঁদেরই গানম্যান দেওয়া হচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, গানম্যান দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে—অনেকেই শিক্ষার্থী, কেউ রিকশায়, কেউ গণপরিবহনে চলাচল করেন। এ অবস্থায় গানম্যান দেওয়া কঠিন। কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ভাবনা চলছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, যারা বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের একজন করে অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে। যারা কম ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের চলাফেরার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোন সময় কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে, তাও জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বিশেষ শাখা (এসবি)বিষয়টি দেখছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেক জুলাই যোদ্ধা ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী মৌখিকভাবে নিরাপত্তা চাইছেন। কিন্তু মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। লিখিতভাবে যারা আবেদন করছেন, তাঁদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। রোববার পর্যন্ত ১২ জন লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুলাই যোদ্ধারা এখনো ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র চাননি। তবে কয়েকজন সংসদ-সদস্য প্রার্থী অস্ত্রের পাশাপাশি গানম্যান চেয়েছেন।

সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কাউকে গানম্যান দেওয়া হয়নি। ডিএমপি ও এসবির পক্ষ থেকে যাদের গানম্যান দেওয়া হয়েছে, তা অনানুষ্ঠানিক ও অস্থায়ীভাবে। আবেদন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে তাঁদের স্থায়ী নিরাপত্তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, জুলাই যোদ্ধা ও সংসদ-সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা নিরাপত্তা চেয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে, কেউ এসবি বা অন্য ইউনিটের মাধ্যমে আবেদন করছেন।

তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা যেমন অনেক, তেমনি নির্বাচনের প্রার্থীও অনেক। তবে সবাই ঝুঁকিতে নেই। যারা ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের নিরাপত্তা দিতে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কী ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। সভা, মিছিলসহ যেকোনো কর্মসূচিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। বেশি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের গানম্যান দেওয়া হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র চেয়েছেন, তাঁদের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় দেখছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন