লিভ টু আপিল খারিজ, অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ
![]() |
| গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে | ফাইল ছবি: বাসস |
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দিয়েছিল। এরপর এ আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলও আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করেছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, ‘লিভ টু আপিলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ তা পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করেছেন। ফলে সরকার গঠন ও কার্যক্রম বৈধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ পেলে বিষয়টি আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) গতকাল বুধবার শুনানি হয়। আপিল বিভাগ আজ আদেশের জন্য দিন রাখে। সকাল পৌনে ১০টায় প্রধান বিচারপতি আদেশ ঘোষণা করেন। ঘোষিত আদেশে বলা হয়, লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করা হলো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের বিষয়টি বলা আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স পাঠানো হয় এবং মতামতের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে রিট করেন। হাইকোর্ট গত ১৩ জানুয়ারি শুনানি শেষে রিটটি সরাসরি খারিজ করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়।
লিভ টু আপিলের শুনানি ২ নভেম্বর শুরু হয়। ৬ নভেম্বর শুনানি নিয়ে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। ১২ নভেম্বর বিষয়টি পুনরায় শুনানির জন্য আসে, তখন আদালত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এরপর গত মঙ্গলবার ও বুধবার শুনানি হয়।
লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ নিজে শুনানিতে অংশ নেন। মামলায় ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হন লেখক ফিরোজ আহমেদ, যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন। তাঁর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরও ইন্টারভেনার হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন।
লিভ টু আপিলে নওগাঁর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইন্টারভেনার হন। তাঁর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানিতে অংশ নেন।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কোনো আইনি দলিল দিয়ে সমর্থিত নয় বলে রিট আবেদনকারীর বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা হয়। তাই এটি আইনি দলিল ও জনগণের ইচ্ছার দ্বারা সমর্থিত। আরও বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ইতিহাসের অংশ, এবং রিটটি ভ্রান্ত ধারণা, বিদ্বেষপ্রসূত ও হয়রানিমূলক, তাই সরাসরি খারিজ করা হলো।’
সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে মনে হয় যে, আইনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, তখন তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামতের জন্য পাঠাতে পারবেন এবং আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জানাতে পারবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে মতামত চেয়ে রেফারেন্স পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাকে নিযুক্ত করেন এবং তাদের শপথ পাঠ করান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন